গাছের ডালে এক পা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে কিশোরকে নির্যাতন

নির্যাতনপ্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় গাছের ডালে এক পা বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে কিশোরকে (১৪) নির্যাতন করেছেন কয়েক যুবক। পাওনা টাকা চাওয়ায় অভিযুক্ত যুবকেরা নির্মমভাবে নির্যাতনের পর ৩০ হাজার টাকা চাঁদাও নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে ওই কিশোরের পরিবার।

উপজেলার চরচারতলা ইউনিয়নে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এ ঘটনা ঘটে। তবে অভিযুক্ত যুবকদের হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায় থানায় অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছে ওই কিশোরের পরিবার। নির্যাতনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর গতকাল সোমবার রাতে ওই কিশোরের পরিবারকে থানায় ডেকে মামলা নিয়েছে পুলিশ।

চরচারতলা ইউনিয়নের চরচারতলা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের (২৮) নেতৃত্বে জামির মিয়া (৪০), মাসুদ মিয়া (৩৮), শাকিল মিয়া (৩০), মো. আকাশ (৩০) ও নাসির মিয়া (৪০) এই নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ। এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও মুঠোফোন বন্ধ পাওয়ায় তোফাজ্জল হোসেন ও মাসুদ মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে জামির মিয়া বলছেন, ওই কিশোরসহ ছয় থেকে সাতজন তোফাজ্জলকে মারধর করে মুঠোফোন ও ৩ হাজার ১০০ টাকা ছিনিয়ে নেয়। বিষয়টি জানালে কিশোরের বাবা নিজেই ছেলেকে শায়েস্তা করতে তাঁদের অনুরোধ করেন। তাই তাকে মেরেছেন। তবে বিষয়টি ভুল হয়ে গেছে উল্লেখ করে জামির মিয়া দাবি করেন, তাঁরা কোনো চাঁদা চাননি, হুমকিও দেননি।

এলাকাবাসী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাবা, মা ও দুই বোনের সঙ্গে চরচারতলা ইউনিয়নের একটি ভাড়া বাসায় থাকে ওই কিশোর। তার বাবা একজন জেলে। সংসারের খরচ চালাতে পড়াশোনা ছেড়ে ওই কিশোরও বাবার সঙ্গে মেঘনা নদীতে মাছ ধরে।

পরিবারের সদস্যরা বলেন, দুই মাস আগে তোফাজ্জল হোসেনের ধান আনা-নেওয়ার নৌকায় শ্রমিক হিসেবে পাঁচ দিন কাজ করে ওই কিশোর। সে সময় ২ হাজার ৩০০ টাকা মধ্যে তাকে দেড় হাজার টাকা দেন তোফাজ্জল। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও পাওনা বাকি ৮০০ টাকা পরিশোধ করছিলেন না। ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামে তোফাজ্জলের সঙ্গে দেখা হওয়ায় পাওনা ৮০০ টাকা চায় ওই কিশোর। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।

পরিবারের অভিযোগ অনুযায়ী, এ ঘটনার জের ধরে ওই দিন দুপুরে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর ওই কিশোরকে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ধরে নিয়ে গিয়ে ডান পা দড়ি দিয়ে একটি কড়ইগাছের ডালের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখেন। একপর্যায়ে মোটা রশি দিয়ে কিশোরকে এলোপাতাড়ি মারধর ও নির্যাতন করেন তাঁরা। দুই ঘণ্টা মারধরের পর কিশোরের মায়ের কাছে ফোন করে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। তিনি আশপাশের প্রতিবেশীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তিনি ওই যুবকদের হাতে-পায়ে ধরে ছেলেকে গাছ থেকে নামাতে অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হলে তাঁরা ও কিশোরকে গাছ থেকে নামান। পরে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ধার করে ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান তিনি।

ওই কিশোরের বোন প্রথম আলোকে বলেন, নৌকায় কাজ করার টাকা চাওয়ায় তোফাজ্জলের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের হাতাহাতি হয়। তোফাজ্জল স্থানীয় চাঁদাবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের ভাড়া করে তাঁর ভাইকে গাছের ডালে ঝুলিয়ে দুই ঘণ্টা মারধর ও নির্যাতন করেন। দুই লাখ টাকা চাঁদা না দিলে হত্যা করে বালুতে পুঁতে ফেলার হুমকি দেন। তিনি বলেন, এ ঘটনা কাউকে বললে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। মধ্যযুগীয় এ নির্যাতনের বিচার চান তাঁরা।

আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাহিদ আহমেদ বলেন, বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমেই জানতে পেরেছেন। এরপর মারধর ও নির্যাতনের শিকার ওই কিশোরের পরিবারকে থানায় ডাকা হয়। এ ঘটনায় গতকাল রাতে কিশোরের বাবা বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত যুবকদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।

ওই কিশোরের মা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেকে গাছে ঝুলিয়ে মারধর করছে তারা। তাদের হাতে–পায়ে ধরে ছেলেকে নিচে নামিয়ে আনি। এভাবে কেউ কি কাউকে এখন মারে!’