নগরে ছনের ছাউনির দোকানে মাটির কাপে চা

সিলেট নগরের রিকাবী বাজারে ভ্যানের ওপর বাঁশের বেড়া ও ছনের ছাউনির দোকানে চা পরিবেশন করেন আকাশ মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

ভ্যানের ওপরে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেড়া। ওপরে ছনের ছাউনি। এটা আকাশ মিয়ার চায়ের ছোট দোকান। ভেতরে গুছিয়ে রাখা মাটির কাপ-পিরিচ। সামনে গ্যাসের সিলিন্ডারের চুলায় দুটি কেটলিতে চা–পাতা দিয়ে পানি গরম করা হচ্ছে। এখানে চা পান করতে আসা লোকজনকে মাটির কাপে চা পরিবেশন করেন তিনি।

সিলেট নগরের রিকাবী বাজার স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় গেলে দেখা মেলবে আকাশ মিয়ার এই চায়ের দোকানের। গ্রামীণ আবহের শৈল্পিক ছোঁয়ায় সাজানো এই দোকানে চা পান করতে এসে মানুষ ভিন্ন ধরনের আমেজ পাবেন।

রিকাবী বাজার এলাকায় স্টেডিয়াম মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, পাশাপাশি চায়ের ১০-১২টি ভ্রাম্যমাণ দোকান। এর মধ্যে আকাশ মিয়ার দোকানটি ব্যতিক্রম। এ দোকানে চা পান করতে আসা মানুষের সংখ্যাও বেশি।

আকাশ মিয়া জানান, তিনি প্রতি কাপ মালাই চা ২০ টাকা করে বিক্রি করেন। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই তাঁর দোকানে আসেন বেশি।

পরিচয় জানতে চাইলে আকাশ মিয়া বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। তাঁর জন্মের আগেই তাঁর বাবা সিলেট নগরে চলে আসেন। তাই তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিলেট নগরে। বর্তমানে তাঁরা নগরের লালদীঘি পাড় এলাকায় থাকেন। তাঁর বাবা কাজীরবাজার থেকে মাছ কিনে নগরের বিভিন্ন পাড়ায় বিক্রি করেন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

এ পেশায় কীভাবে এলেন জানতে চাইলে আকাশ মিয়া বলেন, নগরের রসময় মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয়ে তিনি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। সংসারে অভাবের কারণে এক বছর আগে পড়ালেখা ছেড়ে এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি। দোকান খোলার পর প্রতিদিন গড়ে ২০০ কাপ চা বিক্রি করতে পারেন তিনি। এক বছরের ব্যবসার লাভ দিয়ে গত আগস্ট মাসে তিনি কর্মচারী রেখে এ রকম আরও একটি ব্যবসা শুরু করেছেন।  তাঁর ওই দোকানটি সিলেট নগরের জল্লার পাড় এলাকায়। এখন তাঁর দুই দোকানে চা বিক্রি করে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় হয়।

ভ্যানে মাটির কাপে চা পরিবেশনের ধারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে আকাশ মিয়া বলেন, সিলেট নগরে জন্ম ও বেড়ে ওঠা হলেও গ্রামের বাড়ি শ্রীমঙ্গলে প্রায়ই যান তিনি। সেখানের প্রাকৃতিক দৃশ্য ছোটবেলা থেকেই তাঁর অনেক ভালো লাগে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক মানুষ শুধু প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করার জন্য শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে আসেন। প্রকৃতির প্রতি ওই টান ও ভাবনা থেকেই তিনি নগরে ছোট টং দোকানে প্রকৃতির ছোঁয়া আনার চেষ্টা করেছেন।

প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এখানে চা বিক্রি করা যায়। শীত মৌসুমে চা বিক্রি ভালো হয়। শীত শুরু হওয়ায় বর্তমানে তাঁর দুই দোকানের ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। আগামী ছয়-সাত মাস এ রকম ব্যবসা হলে তিনি শ্রীমঙ্গলে গিয়ে একটি রেস্তোরাঁ খুলবেন। সেখানে খাবারের পাশাপাশি চা বিক্রি করবেন।
আকাশ মিয়া, দোকান মালিক

আকাশ মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত এখানে চা বিক্রি করা যায়। শীত মৌসুমে চা বিক্রি ভালো হয়। শীত শুরু হওয়ায় বর্তমানে তাঁর দুই দোকানের ব্যবসা ভালোই হচ্ছে। আগামী ছয়-সাত মাস এ রকম ব্যবসা হলে তিনি শ্রীমঙ্গলে গিয়ে একটি রেস্তোরাঁ খুলবেন। সেখানে খাবারের পাশাপাশি চা বিক্রি করবেন।’

রিকাবী বাজারের ভাসমান চা–দোকানের মালিকেরা বলেন, ‘এসব দোকান প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চা বিক্রি চলে। স্টেডিয়াম মার্কেটে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা লোকজন ছাড়াও চিকিৎসকদের চেম্বারের কর্মচারী, মার্কেটের ব্যবসায়ী, কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও নগরের তরুণেরা এসব দোকানে চা পান করেন।’