সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটি নিয়ে টানাটানি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি

সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পক্ষের মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধের পর ঘোষিত কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র (বাঁয়ে)। এরপর স্থগিত কমিটি বহালের দাবিতে গতকাল রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে অপর পক্ষ (ডানে)
ছবি: প্রথম আলো

সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ২৮৪ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছে কেন্দ্র।

গত শনিবার কমিটি ঘোষণার পর কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে ছাত্রদের একটি পক্ষ। মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধের পর সোমবার রাতে সেই কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র। এরপর স্থগিত কমিটি বহালের দাবিতে আজ মঙ্গলবার মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেয় অপর পক্ষ।

শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেলের স্বাক্ষর করা এক চিঠিতে আগামী ছয় মাসের জন্য ২৮৪ সদস্যবিশিষ্ট সিরাজগঞ্জ জেলা আহবায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।

কমিটিতে সজীব সরকারকে আহ্বায়ক, মেহেদী হাসানকে সদস্যসচিব, ইকবাল হোসেনকে মুখ্য সংগঠক ও টি এম মুশফিককে মুখপাত্র করা হয়। এরপর কমিটিতে ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে এক পক্ষ আন্দোলনে নামে।

শিক্ষার্থীরা জানান, গত বছরের ১ আগস্ট সিরাজগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১১ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি করা হয়। মূলত সেই কমিটির নেতৃত্বে জেলায় আন্দোলন পরিচালিত হয়। ওই ১১ জনের কয়েকজনকে ঘোষিত কমিটিতে রাখা হয়নি। এর জেরে ওই কমিটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

১১ সদস্যের সমন্বয়ক কমিটির নেতা মুনতাসির হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ৮ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে সিরাজগঞ্জের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলেও ৪ ফেব্রুয়ারি কমিটি অনুমোদন করেছে কেন্দ্র; কিন্তু এর কিছুই জানেন না তাঁরা। অথচ কেন্দ্র সবার সঙ্গে আলোচনা করে কমিটি ঘোষণা করার কথা জানিয়েছিল। তিনি বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের বাদ দিয়ে ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের কমিটি গঠন করেছে। যারা সরাসরি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ জন্য তাঁরা কমিটি বাতিলের দাবি জানান।

কমিটি বাতিলের দাবিতে এক পক্ষের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ। গতকাল সোমবার বিকেলে যমুনা সেতু পশ্চিম গোলচত্বর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

কমিটি বাতিলের জন্য রেলপথ ও মহাসড়ক অবরোধের মতো জনদুর্ভোগের কর্মসূচি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে মুনতাসির হাসান বলেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে কমিটি গঠনের কারণ জানতে কেন্দ্রের সঙ্গে অনেক চেষ্টা করে যোগাযোগে ব্যর্থ হয়ে তাঁরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হন।

শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি ইমরান হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত সব সরকারি কার্যালয়ে আগের ১১ সমন্বয়কের নাম দেওয়া আছে। তাঁদের সবার সঙ্গে আলোচনা না করে আর্থিক সুযোগ–সুবিধার মাধ্যমে নতুন করে ২৮৪ সদস্যের আহবায়ক কমিটি দেওয়া হয়েছিল।

আরও পড়ুন

স্থগিত কমিটির আহবায়ক সজীব সরকার প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে অনেক যাচাই–বাছাই করে ২৮৪ সদস্যের কমিটি অনুমোদন করা হয়। যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁদের নামে চাঁদাবাজিসহ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কারণে আগের ১১ সদস্যের কমিটি থেকে শুধু দুজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের কিছু নেতা–কর্মী নিয়ে কমিটি বাতিলের আন্দোলন করেছেন। মহাসড়ক অবরোধে জনদুর্ভোগে কথা ভেবে কেন্দ্রীয়ভাবে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। অধিকতর যাচাই করে আবার কমিটি পুনর্বহাল করা হবে বলে তাঁরা জেনেছেন।

আরও পড়ুন

আন্দোলনে ত্যাগীদের স্থান না দেওয়ার অভিযোগ তুলে আহ্বায়ক কমিটি বাতিলের দাবি তোলে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। গত রোববার দুপুর ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরে সংবাদ সম্মেলন করে কমিটি বাতিলে ছয় ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তাঁরা। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মাহিন সরকারের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। এ সময় আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাওয়া ৩০ জন স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

স্থগিত কমিটি বহালের দাবিতে অন্য পক্ষের বিক্ষোভ মিছিল। সোমবার রাত ১০ টার দিকে সিরাজগঞ্জ শহরের মুক্তির সোপান এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ঘণ্টাব্যাপী মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন বিকেলে আবার মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। এ ছাড়া সন্ধ্যার পর মহাসড়কের পাশে সয়দাবাদ রেলস্টেশনে দুটি ট্রেন অবরোধ করলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর গতকাল রাতে কমিটি স্থগিত করে কেন্দ্র। এরপর কমিটি বহালের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেয় অন্য পক্ষ।

স্থগিত কমিটির ১ নম্বর সহমুখপাত্র সাদিয়া আহমেদ সিনহা বলেন, জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া প্রকৃত কোনো শিক্ষার্থীই কমিটি থেকে বাদ পড়েননি। যে দুজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে, তাঁরাই আর্থিক বিনিয়োগের মাধ্যমে বহিরাগতদের দিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে মানুষের চরম ভোগান্তি হয়। তাঁরা মানুষের ভোগান্তি চান না। এ জন্য স্থগিত কমিটি সচল করতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

স্থগিত কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে ট্রেন বন্ধ করে বিক্ষোভ

এদিকে স্থগিত আহ্বায়ক কমিটি পুনর্বহালের দাবিতে রেলপথে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীদের এক পক্ষ। এতে আন্তনগর বনলতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন দেড় ঘণ্টা আটকে থাকে।

সিরাজগঞ্জে রেলপথে টায়ার জ্বালিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক পক্ষের বিক্ষোভ। মঙ্গলবার বিকেলে কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলস্টেশনে
ছবি: প্রথম আলো

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত জেলার কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল রেলস্টেশনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জ শহরের মুক্তির সোপান এলাকায় একই দাবিতে শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করেন।

সন্ধ্যা সাতটার দিকে জামতৈল রেলস্টেশনের মাস্টার আবু হান্নান সেখ প্রথম আলোকে বলেন, রেলস্টেশনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে পঞ্চগড়-ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস ও ঢাকা-রাজশাহীমুখী বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেন প্রায় দেড় ঘণ্টা বন্ধ ছিল।