বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবীবিষয়ক সম্পাদক ও কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফর রহমান কাজল বলেছেন, বিএনপি জনগণের দল। জনগণের কথা বলে। বিএনপি হেরে গেলে বাংলাদেশও হেরে যাবে। কট্টরপন্থী কোনো দল ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। তালেবান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে।
আজ রোববার বিকেলে কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে দলের এক জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লুৎফর রহমান এ কথা বলেন। বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে গতকাল শনিবার জুলাই পদযাত্রার এক সমাবেশে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর কটূক্তি, কক্সবাজার সদরের ভারুয়াখালীতে জামায়াতে নেতা-কর্মীদের হামলায় বিএনপির নেতা খুন এবং জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে এই সমাবেশ ডাকা হয়।
বিকেল চারটার আগেই কক্সবাজার সদর, রামু ও ঈদগাঁও উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের অন্তত ২৫ হাজার দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন। মিছিল থেকে জামায়াত-শিবির ও এনসিপির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেওয়া হয়।
পিআর পদ্ধতির নির্বাচনে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে না উল্লেখ করে সমাবেশে লুৎফর রহমান বলেন, পিআর পদ্ধতিতে ভোট হলে জনগণ ভোট দেবেন ঠিকই, কিন্তু কাকে ভোট দেবেন, প্রার্থী কে জানতে পারবেন না, ঝুলন্ত পার্লামেন্ট হবে, তাতে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হবে।
খারাপ ছাত্ররা পরীক্ষায় অংশ নিতে চায় না উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, কারণ ফেল মারার ঝুঁকি থাকে। তেমনি যে দলের কোনো জনসমর্থন নেই, তাদের নির্বাচনে জিতে আসার ভয় থাকে। যারা ভোট পাবে না, তারাই পিআর পদ্ধতি চায়। জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করতে চায়। নির্বাচন বানচালের চক্রান্তে লিপ্ত।
লুৎফর রহমান বলেন, ‘১৯ জুলাই পাবলিক হল ময়দানে বিএনপির কর্মসূচি ছিল। কিন্তু এনসিপির জুলাই পদযাত্রার কথা বললে আমরা (বিএনপি) মাঠ ছেড়ে দিই। অথচ ওই মাঠের সমাবেশ থেকে এনসিপি নেতা নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করতে একটুও দ্বিধা করেননি। আজকের এই প্রতিবাদ সমাবেশে থেকে নাসীরুদ্দীনের ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যতায় কক্সবাজারে এনসিপির কোনো কর্মসূচিতে গন্ডগোল হলে তার দায় বিএনপি নেবে না। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ওই কটূক্তি বিএনপিসহ কক্সবাজারবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে।’
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী পদযাত্রার সমাবেশে বলেছিলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগের আমলে নারায়ণগঞ্জে বিখ্যাত গডফাদার শামীম ওসমান ছিলেন; এখন শুনছি কক্সবাজারে নব্য গডফাদার শিলং থেকে এসেছেন।’
নাসীরুদ্দীনের এই বক্তব্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা। সন্ধ্যা ও রাতে শহরের ঘুমগাছতলার পুরোনো শহীদ মিনার ও প্রধান সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিএনপি, ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। একই সময় চকরিয়া, রামু, ঈদগাঁও, উখিয়া ও টেকনাফে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।
১৩ জুলাই ভারুয়াখালীর পানিছড়ার বটতলী বাজারে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রহিম সিকদারকে হত্যা করা হয়। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে কক্সবাজার সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল মাবুদ বলেন, জামায়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত দেশি অস্ত্র নিয়ে রহিম সিকদারের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করে।
আজকের সমাবেশে রহিম সিকদারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে জানিয়ে লুৎফর রহমান কাজল বলেন, এর মূল কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। বিএনপিকে ধ্বংস করা। জামায়াত নেতা নোমান একসময় স্বেচ্ছাসেবক লীগ করতেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে থাকতেন নোমান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমলের সঙ্গে নোমানের ছবিও আছে।
কক্সবাজারে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে জনগণের ভোগান্তি ও শঙ্কার কথা জানিয়ে লুৎফর রহমান বলেন, কক্সবাজার-৩ আসনের প্রতিটি গ্রাম-মহল্লা-ওয়ার্ডে শান্তি-শৃঙ্খলা উন্নয়ন কমিটি গঠন করে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে তিনি বিএনপি নেতাদের নির্দেশনা দেন।
কক্সবাজার পৌর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল হুদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সুবেদার মেজর (অব.) আবদুল মাবুদ, শহর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল কাশেম, শহর যুবদলের আহ্বায়ক আজিজুল হক, নিহত রহিম সিকদারের বড় ভাই ভারুয়াখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সিকদার।
সমাবেশ শেষে বিশাল মিছিল প্রধান সড়কের খুরুশকুল রাস্তামাথা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন লুৎফর রহমান কাজল।