নরসিংদীতে বালুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলি, টেঁটাবিদ্ধসহ আহত ২০

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদী সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ, টেঁটাবিদ্ধসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। একটি প্রকল্পের বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে আজ বৃহস্পতিবার ভোরে আলোকবালী ইউনিয়নের খোদাদিলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

খোদাদিলা গ্রামের যুবলীগ কর্মী জাকির হোসেন এবং ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিনের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। জাকির ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাদ উল্লাহর কর্মী। অন্যদিকে জয়নাল আবেদিনের পক্ষে রয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন।

নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া গুলিবিদ্ধ দুজন ও টেঁটাবিদ্ধ ছয়জনের পরিচয় জানা গেছে। তাঁদের সবার বাড়ি আলোকবালীর খোদাদিলা গ্রামে। গুলিবিদ্ধ দুজন হলেন মো. আবদুল্লাহ (১৮) ও তৈয়ব মিয়া (১৮)। টেঁটাবিদ্ধ ছয়জন হলেন রমজান মিয়া, খোকা মিয়া, মামুন মিয়া, জয়নাল মিয়ার ছেলে মো. সোহান এবং ছাফির উদ্দিনের দুই ছেলে রাসেল মিয়া ও লতিফ মিয়া।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মেঘনা নদী ও এর শাখানদীর নাব্যতা বৃদ্ধিতে নদী থেকে বালু উত্তোলন গত দুই মাস আগে শুরু হয়। প্রকল্পের নীতি অনুযায়ী, এসব বালু নদীর পাশে রাখার কথা থাকলেও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ইউনিয়নের খোদাদিলাসহ বিভিন্ন গ্রামের ফসলি জমি, পুকুর, ডোবাসহ বিভিন্ন স্থান ভরাট করা হচ্ছে। ভরাট করা বালুর জন্য প্রতি শতাংশে জয়নাল গ্রুপকে ১০-১৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে।

এদিকে এলাকার বাইরে থাকা জাকির গ্রুপও এর ভাগ চায়। ওই প্রকল্পের বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে জাকির গ্রুপ ও জয়নাল গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গতকাল বুধবার রাত থেকে উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। আজ ভোরে জাকির গ্রুপের লোকজন এলাকায় প্রবেশ করতে গেলে দুই পক্ষই টেঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন গুলিবিদ্ধ ও টেঁটাবিদ্ধ হন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে দ্রুত নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠান।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদুল কবির বাসার জানান, ‘আলোকবালীর খোদাদিলা গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় মোট আটজন আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তাঁদের মধ্যে দুজন ছররা গুলিতে বিদ্ধ এবং অন্য ছয়জন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় টেঁটাবিদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে জাকির হোসেন ও জয়নাল আবেদিনের মুঠোফোনে কল দিলেও তাঁদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

নরসিংদী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ জানান, ‘এ সংঘর্ষের ঘটনায় মোট কতজন আহত হয়েছেন, আমরা নিশ্চিত নই। তবে হাসপাতাল থেকে আমরা সাত-আটজনের নাম পেয়েছি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’