হাতীবান্ধায় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যানের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ

আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিকের অবৈধভাবে নির্মিত বৈরালী হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ উচ্ছেদ করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানি এলাকায়ছবি: সংগৃহীত

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে শ্যামলের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানি এলাকায় তিস্তা ব্যারাজসংলগ্ন সরকারি জমির ওপর নির্মিত ইউপি চেয়ারম্যানের বৈরালী রেস্তোরাঁ আজ বুধবার বেলা ১১টার পর উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন।

অভিযুক্ত আবু বক্কর সিদ্দিক লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস)। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আবু বক্কর সিদ্দিক সরকারি জমি দখল করে রেস্তোরাঁটি নির্মাণ করেছিলেন।

উচ্ছেদ অভিযানে লালমনিরহাটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজিয়া নওরীন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আল সোহান, মাসুদ পারভেজ, পুলিশ ও আনসার সদস্য এবং নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা অংশ নেন।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানিতে তিস্তা ব্যারাজসংলগ্ন পাউবোর অধিগ্রহণ করা ২৫ শতাংশ জমি অবৈধভাবে দখল করেন আবু বক্কর সিদ্দিক। দখল করা ওই জমিতে ২০২২ সালের ৭ জুলাই বিকেলে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোতাহার হোসেনকে দিয়ে ‘বৈরালী হোটেল অ্যান্ড রেস্তোরাঁ’ উদ্বোধন করা হয়। পাউবোর আপত্তি ও নানা প্রক্রিয়ার পর গত ১২ মার্চ বৈরালীসহ বেশ কয়েকটি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগসংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ জারি করেন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক। কিন্তু ওই আদেশের দীর্ঘ ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও উচ্ছেদ অভিযান হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত আজ বৈরালী রেস্তোরাঁটি উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

অভিযান চলাকালে লালমনিরহাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইসফাকুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা অবশেষে আজ দখলমুক্ত করা হলো।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আবু বক্কর সিদ্দিকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করে হলে তিনি ধরেননি।

পাউবোর নীলফামারীর ডালিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানি এলাকায় নির্মিত তিস্তা ব্যারাজ বাইপাস লাগোয়া ২৫ শতাংশ জমিতে অবৈধভাবে ২০২১ সালে বালু ভরাট শুরু করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক। এরপর ওই জমিতে পাকা সীমানাপ্রাচীরসহ অন্যান্য অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ বিষয়ে দোয়ানি জোনের পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রাশেদীন ২০২১ সালের ১১ আগস্ট আবু বক্কর সিদ্দিককে তাঁর অবৈধ স্থাপনার নির্মাণকাজ বন্ধ করতে চিঠি দেন। কিন্তু তিনি এতে কর্ণপাত না করে কাজ চালিয়ে যান। পরে একই বছরের ২৫ আগস্ট তাঁকে পাউবোর পক্ষ থেকে আবারও নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনো কিছুতেই পরোয়া না করায় পাউবোর ডালিয়া জোনের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আবদুর রব ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর হাতীবান্ধা থানায় আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন। একই বছরের নভেম্বর মাসে অবৈধ স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ করেন তিনি।

পাউবোর ডালিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ২০২২ সালের ৬ জুন এবং ২০২১ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর তিস্তা ব্যারাজের অধিগ্রহণ করা জমিতে বৈরালী রেস্তোরাঁসহ তালিকাভুক্ত ৪৭টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেওয়া হয়। উচ্ছেদের জন্য তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে ২০২৩ সালের ১২ মার্চ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাউবোকে জানানো হয়। অবশেষে পাউবোর সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনাটি উচ্ছেদ করেছে।