মির্জাপুরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ, সড়ক অবরোধ

ঝুলন্ত মরদেহ
প্রতীকী ছবি

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পুলিশি হেফাজতে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার বাঁশতৈল ফাঁড়িতে তিনি মারা যান। এক নারীর মৃত্যুর ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই দিন দুপুরে তাঁকে আটক করে পুলিশ।

নিহত ব্যক্তির নাম লেবু মিয়া (৫৫)। তাঁর বাড়ি বাঁশতৈল গ্রামে। পরিবারের অভিযোগ, জিজ্ঞাসাবাদের নামে ফাঁড়িতে লেবু মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোষী পুলিশ সদস্যদের প্রত্যাহারসহ তাঁদের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় ব্যক্তিরা মির্জাপুরের গোড়াই-সখীপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সড়কে টায়ারে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে দুপুর ১২টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় আড়াই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেন স্থানীয় ব্যক্তিরা।

এলাকাবাসী ও পুলিশ জানায়, বাঁশতৈল গ্রামের সখিনা আক্তার (৪২) নামের এক নারীর প্রায় পাঁচ বছর আগে বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁর ছেলে প্রবাসী। মেয়েদের বিয়ে হয়েছে। প্রবাসী ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে তিনি নিজের বাড়িতেই থাকতেন। কয়েক দিন আগে ছেলের স্ত্রী তাঁর বাবার বাড়িতে বেড়াতে যান। এর পর থেকে সখিনা বাড়িতে একাই থাকছিলেন। গত সোমবার দুপুরে বাড়ি থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

বাঁশতৈল ইউপির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান জানান, খবর পেয়ে সকালে তিনি ফাঁড়িতে গিয়ে দেখেন লেবু মিয়ার লাশ মেঝেতে পড়ে আছে। তাঁর গলায় রশি প্যাঁচানো ছিল। লেবু মিয়ার ভাতিজা সাদ্দাম হোসেন বলেন, গত সোমবার দুপুরে পুলিশ তাঁর চাচাকে আটক করে। আজ সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর পান। পুলিশি হেফাজতে তাঁর ফাঁসিতে আত্মহত্যার বিষয়টি পরিকল্পিত। হাজতখানায় রশি কীভাবে এল, এ প্রশ্ন তোলেন তিনি। সাদ্দাম বলেন, রাতে হাজতখানার সামনে পুলিশ সদস্য কর্তব্যরত থাকেন। তাঁর সামনে কেউ ফাঁসি নেবেন আর তিনি দেখবেন না, তা হতে পারে না। তা ছাড়া আশপাশের বাড়ির লোকজন রাতে ফাঁড়ির ভেতর চিৎকারের শব্দ শুনেছেন।

এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ সখিনার সাবেক স্বামী বাঁশতৈল গ্রামের মফিজুর রহমান (৪৭) ও একই গ্রামের লেবু মিয়াকে (৫০) আটক করে। আটক ব্যক্তিদের রাতে ফাঁড়ির হাজতখানায় রাখা হয়। সেখানেই লেবু মিয়ার মৃত্যু হয়। পুলিশের দাবি, রাতের কোনো এক সময় লেবু মিয়া গলায় রশি লাগিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এ বিষয়ে মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, ভোর সাড়ে চারটার সময় ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা তাঁকে বাথরুমের রডের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশটি নামানো হয়। পরে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে প্রকৃত ঘটনা জানা যাবে। রাতে হাজতখানায় যে পুলিশ কনস্টেবল দায়িত্বরত ছিলেন, তাঁকে প্রত্যাহার করে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনির হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান ওসি।