তিন বছর ধরে অবৈধভাবে বগুড়ায় কঙ্গোর নাগরিক, জিম্মি-প্রতারণার পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

বগুড়ার মানচিত্র

তিন বছর ধরে অবৈধভাবে বগুড়ায় অবস্থান করছেন কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের নাগরিক ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গে। তাঁর অভিযোগ, ব্যবসায়িক লেনদেনের জেরে বগুড়ার এক ব্যবসায়ী তাঁর পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে তাঁকে তিন বছর ধরে জিম্মি করে রেখেছেন।

তবে পুলিশ বলছে, কঙ্গোর ওই নাগরিককে কেউ জিম্মি করেনি। টাকাপয়সা লেনদেনের জেরে তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় করণীয় জানতে চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) জরুরি বার্তা পাঠিয়েছে জেলা পুলিশ।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর বগুড়া সদরের গোকুল এলাকার শৌখিন পাখি ব্যবসায়ী আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে তাঁকে জিম্মি করে রাখার অভিযোগ তোলেন ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গে।

বগুড়া সদর থানায় দেওয়া লিখিত অভিযোগে ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গে উল্লেখ করেন, তিনি পাখি রপ্তানি করেন। ২০২২ সালে অনলাইনে আতিকুর রহমানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। আতিকুর তাঁর কাছ থেকে পাখি কেনার আগ্রহের কথা জানালে ওই বছরের ১ নভেম্বর তিনি ভ্রমণ ভিসায় বগুড়ায় আতিকুরের বাড়িতে আসেন। এক মাস পর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু ব্যবসায়িক লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় আতিকুর তাঁর পাসপোর্ট ও ভিসার কাগজপত্র কেড়ে নেন। এর পর থেকে তিনি বাধ্য হয়ে আতিকুরের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন।

ভিটো বলি বোঙ্গেঙ্গের অভিযোগ, জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে আতিকুর অর্থ দাবি করায় তাঁর স্ত্রী গ্লোরিয়া এনটাঙ্গা মুটোম্বো কঙ্গোতে বাড়ি বিক্রি করে বিপুল অঙ্কের টাকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তাঁর মুক্তি মেলেনি। এখন দেশে ফিরে যেতে তিনি পুলিশের সহযোগিতা চান।

অভিযোগের বিষয়ে ব্যবসায়ী আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক মাসের ট্যুরিস্ট ভিসায় ২০২২ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশে আসেন ভিটো বলি। ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে তিনি আমার বাড়িতে থেকে পাখির ব্যবসা শুরু করেন। বিদেশ থেকে পাখি আমদানির চুক্তি হয় আমার সঙ্গে। চুক্তি অনুযায়ী কঙ্গোর প্রতিষ্ঠান ইটিএস এমবয়ো অ্যান্ড ফ্রেরেসেতে ১০ হাজার ডলার পাঠানোর বিনিময়ে ২০০ বিদেশি পাখি বাংলাদেশে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৬০টি জার্ডিন প্যারোট ও ১৫টি গ্রেড বুল টরাকো বুঝিয়ে দেন। পরের দফায় ২০২৩ সালের জুনে আরও ২০০ পাখি আমদানির জন্য ভিটোর মাধ্যমে আরও ১৫ হাজার ডলার পাঠানো হয়। কিন্তু শর্ত ভঙ্গ করে মাত্র ৯০টি পাখি বুঝিয়ে দেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নতুন করে ২০০ পাখি আমদানির জন্য তাঁর মাধ্যমে আরও ১২ হাজার ডলার পাঠানো হয়। কিন্তু একটি পাখিও বুঝিয়ে দেননি তিনি। এখন ভিসা ও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ায় রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় দেশে ফেরার কৌশল হিসেবে নিজেকে আটকে রাখার দাবি করে তিনি বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।’

জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির প্রথম আলোকে বলেন, ভিটো বলি ২০২২ সাল থেকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশি কোনো ব্যবসায়ীর কাছে টাকাপয়সা পাওয়ার বৈধ কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন টাকাপয়সা পাওয়ার দাবি করেছেন। তাঁকে কেউ জিম্মি করে রাখেনি। তবে টাকাপয়সা লেনদেনের জেরে পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে জেনেছেন।