গৌরনদীতে হারিছুরকে ঠেকাতে এক মঞ্চে আওয়ামী লীগের চার নেতা

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী মো. হারিছুর রহমানকে ঠেকাতে এক মঞ্চে সভা করেছেন চারজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী। এই প্রার্থীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান তাঁদের সমর্থকেরাছবি: সংগৃহীত

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মো. হারিছুর রহমানকে ঠেকাতে এক মঞ্চে সভা করলেন চারজন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী। তাঁরা প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।

গতকাল শনিবার বিকেলে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে সভা শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে। সভায় চার নেতা ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। চারজন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিজয়ের লক্ষ্যে তাঁরা একজনকে সমর্থন দিয়ে বাকি তিনজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন।

গৌরনদী পৌরসভার সদ্য সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থী হিসেব আমার পক্ষে গণজোয়ার শুরু হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আমার বিজয় সুনিশ্চিত দেখে প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষরা হিংসায় জ্বলে-পুড়ে মরছে এবং ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে।’

এই চার নেতা হলেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দা মনিরুন নাহার ওরফে মেরী, সাবেক মেয়র হারিছুর রহমানের সহোদর ও বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. হাবিবুর রহমান, গৌরনদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মনির হোসেন মিয়া এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈকত গুহ ওরফে পিকলু।

সৈকত গুহ বলেন, উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রায় এক বছর আগে থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে সাত থেকে আটজন প্রবীণ ও ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতা গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণা ও মতবিনিময় সভা করে আসছিলেন। গত ৩১ মার্চ এসব সম্ভাব্য প্রার্থীর মতামত ছাড়াই মো. হারিছুর রহমানকে সংসদ সদস্য–মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরপর সবাই প্রার্থী হওয়ার আশা ছেড়ে দেন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রের ঘোষণার পরে পুনরায় কেউ কেউ মাঠে নামেন।

সৈকত গুহ আরও বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে নামা প্রার্থীদের হারিছুর রহমান ও তাঁর সমর্থকেরা গৌরনদী থেকে বিতাড়িত করাসহ বিভিন্ন হুমকি দেন। হুমকি মোকাবিলা ও সন্ত্রাসী প্রতিরোধের তাগিদ থেকে আমি সকল প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক মঞ্চে বসার আয়োজন করি।’

মো. মনির হোসেন মিয়া ঐকমত্যের সিদ্ধান্তের কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একচ্ছত্র আধিপত্যবাদ ও সন্ত্রাসমুক্ত গৌরনদী গড়তে ঐক্যর বিকল্প নেই। তাই আমরা আগামী উপজেলা নির্বাচনে চারজন প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেব। পরবর্তীতে একজন প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী মাঠের প্রতিপক্ষ অরাজকতা সৃষ্টিকারী ও সন্ত্রাসীদের মোকাবিলা করব।’

এক মঞ্চে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা নিশ্চিত করেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দা মনিরুন নাহার মেরী ও মো. হাবিবুর রহমান।

সভার সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দা মনিরুন নাহার বলেন, ‘গৌরনদীবাসীর স্বার্থে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আমরা সন্ত্রাস ও দানবমুক্ত গৌরনদী গড়তে চাই।’

মো. হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চার প্রার্থী একত্রিত হয়েছি। চারজন প্রার্থী হলেও শেষ পর্যন্ত একজনকে নিয়ে মাঠে নামব এবং তাঁর বিজয় নিশ্চিত করব।’

গৌরনদীতে তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ আগামী ২ মে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ৫ মে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ১২ মে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ ১৩ মে। ভোট গ্রহণ ২৯ মে।