সিলেটে শহীদ মিনার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হবে না: মেয়র
সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হবে না বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। এর আগে কয়েক দিন ধরে চাউর হয়েছিল শহীদ মিনারে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গেলে সিটি করপোরেশনকে টাকা (ফি) দিতে হবে। এরপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে ১১ মার্চ শনিবার বৈঠক ডেকেছে সিটি কর্তৃপক্ষ।
গতকাল ওই বিজ্ঞপ্তিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, শহীদ মিনার নিয়ে কোনো ধরনের বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। শহীদ মিনারে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ তথা ধর্মনিরপেক্ষ প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কার্যক্রম যেন নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পবিত্রতা রক্ষায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে সিলেট সিটি করপোরেশন। শহীদ মিনার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পবিত্রতা কোনোভাবেই লঙ্ঘিত হতে দেওয়া হবে না। শহীদ মিনারের কোনো স্থাপনা বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিচালনা বিষয়ে ১১ মার্চ শনিবার অনুষ্ঠিতব্য নির্ধারিত সভায় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে শহীদ মিনারের ভাবগাম্ভীর্য, পবিত্রতা রক্ষা ও বাঙালি সংস্কৃতির চেতনাবিরোধী চক্রান্ত বন্ধের দাবি জানিয়ে গতকাল রাতে বিবৃতি দিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট। এতে শহীদ মিনারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অতিউৎসাহী মনোভাব পরিহারের জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক শামসুল আলম, সিলেটের সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের প্রধান পরিচালক অরিন্দম দত্ত, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উজ্জ্বল দাশ ও সাধারণ সম্পাদক রজতকান্তি গুপ্ত।
বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি শহীদ মিনার ব্যবহারের জন্য সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃক ভাড়া নির্ধারণের বিষয়টি শুনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট ও সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের নেতারা মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ সময় ভাড়ার প্রস্তাবনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে শহীদ মিনারের চেতনাবিরোধী এ প্রস্তাবনা অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানানো হয়। পরদিনই সিটি করপোরেশন এ প্রস্তাবনা বাতিল করেছে বলে তাঁদের মৌখিকভাবে জানানো হয়। ওই বিবৃতিতে সাংস্কৃতিক নেতারা আরও বলেন, শহীদ মিনার ব্যবহারে সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রয়োজন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী ও শহীদ মিনারে পবিত্রতা এবং চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আয়োজন যেন না হয়, সে বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এর আগে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শহীদ মিনারে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন নানা অনুষ্ঠান করে থাকে। এ জন্য সিটি করপোরেশন থেকে লিখিত অনুমতি নিতে হয়। তবে কোনো ফি দিতে হয় না। সম্প্রতি খবর রটেছে, শহীদ মিনার চত্বর ব্যবহার করতে হলে মার্চ মাস থেকে ফি গ্রহণের মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ফেসবুকে এ বিষয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দেন। বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাসদ, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিলেটের রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০ বিশিষ্ট ব্যক্তি বিবৃতি দিয়ে ‘সিটি করপোরেশনের দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত রুখে দাঁড়ানো’র আহ্বান জানিয়েছেন।