বন্যার পর থেকে ধারদেনা করে চলছেন কৃষক আউয়াল
দুপুরের তপ্ত রোদে হাওরে আমন ধানের পরিচর্যা করছিলেন কৃষক আউয়াল ইসলাম (৭৩)। ধানের গোড়া থেকে আগাছা পরিষ্কারে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন তিনি। সিলেট সদর উপজেলার উফতার হাওরে তাঁর প্রায় সাত বিঘা জমি রয়েছে। এর মধ্যে চার বিঘা জমি মধ্য হাওরে। ওই চার বিঘা জমি এখনো পানিতে নিমজ্জিত। অন্য তিন বিঘা জমি হাওরের তীরে সড়কের পাশে। ওই জমিতেই কাজ করছিলেন আউয়াল।
চলতি বছরে প্রথম দফার বন্যায় আউয়ালের চার বিঘা জমির বোরো ধান পানিতে ভেসে গিয়েছিল। ওই জমির ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারলে ব্যবসার জন্য নেওয়া ঋণ শোধ করার চিন্তা করেছিলেন। কিন্তু ধান ভেসে যাওয়ায় এখন আবার নতুন করে ঋণ করতে হয়েছে তাঁকে।
আউয়াল ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার বিমানবন্দর এলাকার বাওরকান্দি গ্রামে। তরুণ বয়স থেকেই তিনি কৃষিকাজ করছেন। এটা দিয়েই তাঁর সংসার চলছে। কৃষিকাজ করেই জমি কিনেছেন। তবে বয়সের কারণে আউয়াল মাঠে দীর্ঘক্ষণ কাজ করতে পারেন না। দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। এখন ঘরে সদস্যসংখ্যা ছয়। ছেলেরাও কৃষিকাজ করেন। তবে সংসারের খরচ জোগাতে তিনি এখনো মাঠে কাজ করেন।
প্রায় ৫০ বছর ধরে আউয়াল এই অঞ্চলে কৃষিকাজ করছেন। তবে এবারের মতো বন্যা তিনি কখনো দেখেননি। আউয়াল বলেন, এবারের বন্যায় সড়কের ওপরেও প্রায় পাঁচ ফুট পানি ছিল। এমন অবস্থায় জমির ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সাধারণত এ এলাকার জমিগুলোতে বছরে দুটি ফসল ফলানো যায়। এর মধ্যে বর্তমানে আমন ধান এবং শুকনা মৌসুমে খালের পানি সেচ দিয়ে বোরো ধান ফলানো যায়। ফলানো ধানের মধ্যে বোরো ধান বিক্রি করে সংসার চালান। আর আমন ধানের বেশির ভাগ অংশ পরিবারের জন্য রেখে দেন। কিন্তু এবার বোরো ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়তে হয়েছে।
এবার বোরো ধান আবাদ করতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ করেছিলেন। ফসল তুলতে না পারায় পুরো টাকা পানিতে গেছে। এখন ঋণ করে আমন ধানের জন্য টাকা জোগাতে হচ্ছে। ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে দুই বছর আগে পোলট্রি খামার করেছিলেন আউয়াল। বন্যায় খামারের বেশ কিছু মুরগি মারা গেছে।
আউয়াল ইসলাম বলেন, আরেকজনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে খামারে কিছু মুরগি তুলেছিলেন। কিন্তু সুদসহ ঋণের কিস্তি দিতে গিয়ে নিজের জন্য আর কিছু অবশিষ্ট থাকে না। এরপরও টেনেটুনে খামারটি চালাচ্ছেন। কিন্তু এবারের বন্যা তাঁকে দুই বছরের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে হয়তো এবার ঋণ শোধ করতে পারতেন। এখন পরের বছরও ঋণ শোধ করতে পারবেন কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে। এর মধ্যে যদি আগামী বোরো মৌসুমে আবার বন্যা হয়, তাহলে সবকিছু হারাতে হবে তাঁকে।
সিলেট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, সিলেটে প্রথম ধাপের বন্যায় আউশ ধানের ১ হাজার ৩০১ হেক্টর বীজতলা, ১ হাজার ৭০৪ হেক্টর বোরো ধান ও ১ হাজার ৪ হেক্টর গ্রীষ্মকালীন সবজি পানিতে তলিয়ে গেছে।