থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন নেই, তবু কক্সবাজার সৈকতে লাখো পর্যটকের সমাগম

৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটকের সমাগম হতে পারে। বর্তমানে তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টের কক্ষ খালি নেই। ছোট ও মাঝারি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজগুলোর বেশির ভাগ কক্ষও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং দিয়েছেন পর্যটকেরা। এ জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার পর্যটকের ধারণক্ষমতা রয়েছে।

কক্সবাজারে সৈকতে পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল বিকেলে সুগন্ধা পয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

গত কয়েক বছরের মতো এবারও কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন নেই। তবু ২০ ডিসেম্বর থেকে সৈকতে পর্যটকের ঢল নেমেছে। ওই দিন থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার পর্যটক এলেও আজ বৃহস্পতিবার সেই সংখ্যা দ্বিগুণ হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।

জেলার হোটেলমালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ২০ হাজার পর্যটকের সমাগম হতে পারে। বর্তমানে তারকা মানের হোটেল ও রিসোর্টে কক্ষ খালি নেই। ছোট ও মাঝারি হোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজগুলোর বেশির ভাগ কক্ষও ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুকিং দিয়েছেন পর্যটকেরা। এ জেলায় পাঁচ শতাধিক হোটেল মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার পর্যটকের ধারণক্ষমতা রয়েছে।

শুঁটকি, শামুক ও ঝিনুকের তৈরি রকমারি গয়না কিনছেন পর্যটকেরা। গতকাল বিকেলে কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিক, ট্যুর অপারেটর, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, আজ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাত দিনে অন্তত আট লাখ পর্যটক সৈকতে বেড়াতে আসবেন। এর আগের পাঁচ দিনে এসেছেন প্রায় চার লাখ পর্যটক। বছরের শেষ ১০ দিনে জেলায় সব মিলিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ, শুঁটকি, মৎস্য, শামুক-ঝিনুকসহ ১৭টি খাতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে।

‘নিরাপত্তার কারণে সাত থেকে আট বছর ধরে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন  হচ্ছে না। এবারও তা–ই হচ্ছে। তবে হোটেল ও রিসোর্টগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন আয়োজন করবে।’
আবুল কাশেম সিকদার, কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি

কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘আজ পর্যটকের সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ৩১ ডিসেম্বরও এক দিনে দেড় লাখ পর্যটকের সমাগম হতে পারে। সব মিলিয়ে সাত দিনে অন্তত আট লাখ পর্যটক কক্সবাজারে আসবেন।’

এ বছর উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন নেই। তবে হোটেল ও রিসোর্টগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন আয়োজন করবে বলে জানান আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে সাত থেকে আট বছর ধরে সৈকতের উন্মুক্ত স্থানে থার্টি ফার্স্ট নাইটের আয়োজন করা হচ্ছে না। এবারও তা–ই হচ্ছে।

যা থাকছে থার্টি ফার্স্ট নাইটে

গত বছরের মতো এবারও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের প্যাঁচার দ্বীপের ‘মারমেইড বিচ’ রিসোর্টে দুই দিনব্যাপী ‘বার্নিং ক্র্যাব ফেস্টিভ্যাল’-এর আয়োজন থাকছে। ৩১ ডিসেম্বর রাত ও ১ জানুয়ারি  খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে থাকছে দেশি-বিদেশি ডিজে ও মিউজিকের লাইভ পারফরম্যান্স। এ ছাড়া থাকছে ফুড ফেস্টিভ্যাল ও নববর্ষের কাউন্টডাউন।

রিসোর্টটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই আয়োজনে সরকারের উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকতে পারেন।’

অবশ্য শুধু মারমেইডে নয়; ওশান প্যারাডাইস, বে-ওয়াচ, সায়মান বিচ রিসোর্ট, হোটেল রামাদা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, রয়্যাল টিউলিপ, হোটেল কক্স টুডে, সিগাল ও বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজসহ বিভিন্ন হোটেলে থার্টি ফার্স্ট নাইট উপলক্ষে নিজস্ব আয়োজন থাকছে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, উন্মুক্ত স্থানে আয়োজন না থাকলেও গভীর রাত পর্যন্ত পর্যটকদের নিরাপত্তায় কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভসহ বিনোদনকেন্দ্রগুলোতেও বাড়তি নজরদারি থাকবে। গত পাঁচ দিনে কোনো পর্যটক হয়রানির শিকার হননি।

সৈকতে উপচে পড়া ভিড়

গতকাল বুধবার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা গেছে, প্রায় এক কিলোমিটারজুড়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটক। এ ছাড়া কলাতলী সৈকতে ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার ও সিগাল-লাবণী পয়েন্টে ছিল ২০ থেকে ২৫ হাজার পর্যটক। পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর বড়দিনের ছুটির সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় অনেকেই এক দিনের বাড়তি ছুটি নিয়ে ঘুরতে এসেছেন। তবে বাড়তি ভাড়া ও জিনিসপত্রের অতিরিক্ত দামে হতাশ অনেকেই।

সৈকতে দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সি-সেফ লাইফগার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল শহরের পাঁচ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে প্রায় এক লাখ পর্যটকের সমাগম ছিল। তাঁদের নিরাপত্তায় ২৬ জন লাইফগার্ড দায়িত্ব পালন করছেন।

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক হায়দার আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি, কিন্তু অতিরিক্ত ভিড়ে হতাশ হতে হয়েছে। এরপরও পরিবার নিয়ে ভালো সময় কেটেছে।’

একই দাবি পর্যটক আবুল হায়াতের। তিনি বলেন, ‘উপচে পড়া ভিড়ের সুযোগে অসাধু কিছু হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক গলাকাটা ব্যবসা করছেন। শুঁটকি, শামুক ও ঝিনুকের তৈরি রকমারি গয়নাও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাড়তি দামের এ দাবি অস্বীকার করেন কক্সবাজার হোটেল–গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার। তিনি বলেন, হোটেলের অভ্যর্থনাকক্ষে ভাড়ার তালিকা টাঙানো থাকে, আবার রেস্তোরাঁগুলোতেও খাবারের মূল্যতালিকা লাগানো থাকে। তালিকা দেখেই পর্যটকেরা সবকিছু করছেন।

জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা ও ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে কাজ করছেন।