ধামরাইয়ে ইটভাটায় মরছে ধানগাছ

এ ঘটনায় সোমবারের মধ্যে ভুক্তভোগীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

ঢাকার ধামরাই উপজেলায় ইটভাটার চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও গরম কালো ধোঁয়ায় জমির ধানগাছ মরে গেছে। গতকাল দুপুরে তোলাছবি: প্রথম আলো

ঢাকার ধামরাই উপজেলার আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী এলাকায় ইটভাটার চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও গরম কালো ধোঁয়ায় কৃষিজমির ধানগাছ মরে যাচ্ছে। ফলে ধান চিটায় পরিণত হয়েছে। তাই ক্ষতিপূরণের দাবিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।

 এ ঘটনায় সোমবারের মধ্যে ভুক্তভোগীদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান।

ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, উপজেলার নান্দেশ্বরী এলাকায় অবস্থিত মডার্ন ব্রিকস কোম্পানি নামে একটি ইটভাটার চিমনির বিষাক্ত গ্যাস ও গরম কালো ধোঁয়ায় তাঁদের প্রায় ৮০০ শতাংশ জমির ফসল নষ্ট হয়েছে।

গতকাল শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, ধামরাই উপজেলার কালামপুর-সাটুরিয়া আঞ্চলিক সড়কের নান্দেশ্বরী এলাকায় চারটি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে গত সপ্তাহের শুরুর দিকে মডার্ন ব্রিকস কোম্পানি নামে একটি ইটভাটার আগুন নেভায় ইটভাটা কর্তৃপক্ষ। ওই ইটভাটার অদূরে বড় নারায়ণপুর এলাকায় কৃষিজমিতে আবাদ করা হয়েছে বোরো ধান। এসব জমির মধ্যে কয়েকটি জমির ধানগাছের পাতা পুড়ে বিবর্ণ হয়ে আছে। ধানগুলোও চিটায় পরিণত হয়েছে। এসব জমির পাশেই কয়েকজন কৃষককে জমিতে কাজ করতে দেখা যায়।

ধানগাছের পাতা বিবর্ণ হওয়া ও ধানের চিটায় পরিণত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা অভিযোগ করেন, মডার্ন ব্রিকস কোম্পানির ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাস ও গরম কালো ধোঁয়ার তাপে ধানের এ ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় অন্তত ২০ জন কৃষক।

বড় নারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুস সামাদ ১০০ শতাংশ জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘১০০ শতাংশ জমিতে ধান রোপণ করেছিলাম। গত সপ্তাহের শুরুর দিকে যেদিন ইটভাটার আগুন নেভায়, ওই দিন দুপুরে জমিতে কাজ করছি। বিকেলের দিকে জমিতে এসে দেখি ধানগাছ সব পুড়ে গেছে। আশপাশের জমিরও একই অবস্থা।’

আবদুস সামাদ আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার উপজেলায় গেছিলাম ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিতে। তখন চেয়ারম্যান আরিফ হোসেনের সঙ্গে দেখা হয়। সমস্যা শোনার পর তিনি সমাধানে সহযোগিতা করবেন বলে জানায়, এরপর আমরা চলে আসি।’

জমির পাশে দাঁড়িয়ে ভুক্তভোগী মো. সাদেক আলী প্রথম আলোকে বলেন, এবার ৩৩ শতাংশ জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। গত সপ্তাহে মডার্ন ব্রিকস কোম্পানি ইটভাটা বন্ধ করলে (আগুন নেভানো) ধান পুড়ে গেছে।

মডার্ন ব্রিকস কোম্পানি ইটভাটার ব্যবস্থাপক ফারুক হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে আগুন নেভানো হয়েছে। ইটভাটা থাকলে জমির ক্ষতি হয়ই।

তাঁদের ইটভাটার কারণে পার্শ্ববর্তী ধানের গাছ পুড়ছে এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

ধামরাইয়ের আমতা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন বলেন, কৃষকেরা প্রথমে ৭০০ থেকে ৮০০ শতাংশ জমি ক্ষতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। পরে তাঁদের নিয়ে কৃষিজমিতে গিয়েছিলাম। কৃষকেরা প্রায় ৪০০ শতাংশ জমির ফসলের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে দিতে বলেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইটভাটার মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি, সোমবার কৃষকেরা তাঁদের প্রত্যাশিত ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবেন।

ধামরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, ‘বড় নারায়ণপুর এলাকায় ইটভাটার কারণে ফসলের ক্ষতির বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তবে বিষয়টি আমি শুনেছি। এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’