কুষ্টিয়ায় নাশকতার মামলায় ছাত্রদল, ছাত্রলীগের নেতাসহ ১১ জন কারাগারে

কুষ্টিয়ায় নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তার ১১ জনকে আদালতে তোলা হয়। রোববার বিকেলে কুষ্টিয়া মডেল থানায়
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়ায় দায়ের হওয়া নাশকতার মামলায় জেলা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক, ছাত্রদলের সাত নেতা–কর্মীসহ ১১ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তাঁদের জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে আসামিদের বেলা তিনটার দিকে আদালতে হাজির করে কুষ্টিয়া মডেল থানা–পুলিশ।

গতকাল শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের কমলাপুর গ্রামে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সড়ক থেকে তাঁদের আটক করে পুলিশ। পরে রাত ১২টার পর কুষ্টিয়া মডেল থানায় হওয়া নাশকতা মামলায় সবাইকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের ধারাও উল্লেখ করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আছেন জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম (৪২), জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন ওরফে নিশাত (৩০) এবং কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির আইনবিষয়ক উপসম্পাদক সামিউল হক ওরফে সম্রাট। বাকি আটজন হলেন সলেমান উদ্দীন শেখ (৩৭), হৃদয় হাসান (২২), সানজেদ খান (২০), মেহেদী হাসান (২০), হামিম হোসেন (২০), ওয়াসিম আলী (২২), এস এম দিপ আজাদী (২১) ও কিশোর বিশ্বাস (১৯)। তাঁরা সবাই বিএনপির বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

কুষ্টিয়া মডেল থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেলে সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ভবনের সামনের সড়কে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি বিস্ফোরক ককটেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁরা সেখানে নাশকতা চালানোর চেষ্টা করেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের ধাওয়া দেয়। একপর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন ওই ব্যক্তিরা। তাঁরা সড়কের গাড়ি ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে ভাঙচুর চালান। পুলিশের কয়েকজন সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১১ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

এরপর রাত ১২টার পর কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক সাজু মোহন সাহা বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭০–৮০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে আসামিরা ককটেল বোমা নিয়ে নাশকতার চেষ্টা করছিলেন। আজ বিকেলে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার বলেন, জিয়ারখী ইউনিয়ন বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করতে এলে বিএনপির নেতা–কর্মীদের প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যায়। পরে আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ পুলিশ-প্রশাসনের লোক বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের ১১ নেতা–কর্মীকে ধরে নিয়ে যায়। তাঁদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন জাকির হোসেন।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের পরপর দুটি কমিটিতে পদধারী নেতা সামিউল হক। তারপরও তাঁর বিএনপির কর্মসূচিতে ছাত্রদলের হয়ে অংশ নেওয়ার বিষয়ে শহরে আলোচনা–সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বক্তব্য জানতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁরা কেউ ধরেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, বিষয়টি নিয়ে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তবে বর্তমান কমিটিতে পদ পাওয়ার কয়েক দিন পর সামিউল নিজ থেকে পদ প্রত্যাহার করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর চাচা বিএনপির নেতা জাকির হোসেন সরকারের সঙ্গে রাজনীতি করেন।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, ঘটনাস্থলে বিশৃঙ্খলা করার সময় যাদের হাতেনাতে ধরা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপরাধী যে–ই হোক, তার কোনো দলীয় বা সাংগঠনিক পরিচয় আইনের কাছে মুখ্য নয়। তারা সবাই এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।