ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করেছে পুলিশ

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের পুড়ে যাওয়া ঘরে পুলিশের তল্লাশি। আজ বিকেলে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের ঘরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার বিকেলে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে এসব তালা উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন লক্ষ্মীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক।

গত শুক্রবার গভীর রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায় বেলাল হোসেনের ঘরে আগুন লাগে। বেলাল লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সূতারগোপ্তা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। বেলালের অভিযোগ, দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে তাঁর ঘরে আগুন দেওয়া হয়। আগুনে পুড়ে বেলালের সাত বছর বয়সী কন্যা আয়েশা আক্তারের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া বেলাল এবং তাঁর দুই মেয়ে বীথি আক্তার (১৪) ও সালমা আক্তার স্মৃতিও (১৭) এ ঘটনায় দগ্ধ হয়। বীথি ও স্মৃতিকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বেলালকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা তালা। আজ বিকেলে সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

ঘটনার পর গত শনিবার পুলিশ দাবি করেছিল, আগুনের ঘটনায় নাশকতার কোনো ‘বিশ্বাসযোগ্য’ আলামত পাননি তাঁরা। শনিবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

তবে আজ ঘটনাস্থলে তালার সন্ধান পাওয়া গেল। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. রেজাউল হক বলেন, ‘তদন্তের অংশ হিসেবে আজ ঘটনাস্থলে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তিনটি তালা উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা তালাগুলো ঘটনার সঙ্গে কীভাবে সংশ্লিষ্ট, তা যাচাই করা হচ্ছে। আগুন দেওয়ার ঘটনাটি পরিকল্পিত কি না এবং এর পেছনে কারা জড়িত—সব দিক গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে উদ্ধার করা আলামতগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার আওতায় আনা হবে। এ ঘটনা এখনো মামলা হয়নি।’

আরও পড়ুন

পুলিশ জানায়, তিনটি তালার মধ্যে দুটি তালা দুই দরজার কড়ায় (শিকল) লাগানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একটি তালা দরজার দুটি পাল্লার সঙ্গে লাগানো ছিল। অন্য তলাটি একটি কড়ার মধ্যে লাগানো ছিল। আরেকটি তালায় চাবি লাগানো ছিল।

এ ঘটনার পর থেকেই বিএনপি নেতা বেলাল হোসেন দাবি করে আসছেন, আগুন দেওয়ার আগে তাঁর ঘরের দুই দরজায় তালা লাগানো ছিল। আজ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘দুই দরজাই বাইরে থেকে তালাবন্ধ ছিল। আগুন আর ধোঁয়ার মধ্যে আমি, আমার স্ত্রী ও দুই মেয়ে কোনোভাবে ঘরের টিনের বেড়া ফাঁকা করে বের হয়ে আসি। ছোট মেয়েকে বের করতে পারিনি।’

আরও পড়ুন
আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া শিশু আয়শা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

বেলাল হোসেন আরও বলেন, ‘বের হয়ে আসার সময় ছোট মেয়ে আয়েশা আমাকে ডাকছিল—ওকে আনতে বলছিল। কিন্তু আগুনের তীব্রতা আর ধোঁয়ার কারণে আমি কিছুই দেখতে পারছিলাম না। একপর্যায়ে আগুন এত ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে আর ঘরের ভেতরে ঢোকার সুযোগ ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করেছি, কিন্তু আগুনের কারণে মেয়েকে উদ্ধার করতে পারিনি।’ কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

গতকাল রোববার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, অগ্নিকাণ্ডে বেলাল হোসেনের টিনের ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে পোড়া টিন, কাঠ আর গৃহস্থালির জিনিসপত্রের অবশিষ্টাংশ। যেখানে একসময় পরিবারের থাকার জায়গা ছিল, সেখানে এখন শুধুই ছাই আর পোড়া গন্ধ। পুরো ঘরের কাঠামো ভেঙে পড়লেও দাঁড়িয়ে আছে কেবল কয়েকটি পিলার।

এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যান বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এর আগে ৯টার দিকে দগ্ধ বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনকে দেখতে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে যান তিনি। এ সময় তিনি বেলালের হাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহায়তা হিসেবে চার লাখ টাকা তুলে দেন। রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিসহ দলের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন