সড়কজুড়ে নির্মাণসামগ্রী, চলাচলে ভোগান্তি 

গত ৫ বছরে নতুন সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, প্রশস্তকরণে ৭০০ কোটি  টাকা ব্যয় করা হয়েছে। 

রংপুর নগরের পর্যটন পূর্বপাড়া এলাকায় সড়কের ওপর বাসাবাড়ি তৈরির নির্মাণসামগ্রী ফেলে রাখা হয়েছে। এতে সংকুচিত হয়ে গেছে সড়ক
ছবি: প্রথম আলো

রংপুর নগরের সড়কগুলো সংস্কার করে প্রশস্ত করা হলেও এর সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। সড়কের ওপর আশপাশের লোকজন নির্মাণসামগ্রী স্তূপ করে রেখেছেন। এর ফলে সংকীর্ণ হয়ে গেছে গাড়ি চলাচলের পথ। আবার পাথর-ইটে চোট পেয়ে প্রতিদিনই পথচারীরা আহত হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আজম আলী বলেন, গত ৫ বছরে নতুন সড়ক নির্মাণ, সংস্কার, প্রশস্তকরণে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তাঁদের পক্ষ থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরপর কয়েক দিন সড়কগুলোর অবস্থা ভালো থাকে। পরে আবার লোকজন সড়কে নির্মাণসামগ্রী রাখা শুরু করেন।

এর আগে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। মালামাল জব্দও করা হয়েছে। অভিযান করে চলে আসার কিছুদিন পর আবার একই অবস্থা হয়ে থাকে। 
মাহমুদ হাসান মৃধা, সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, শহরের কেরানীপাড়া চারমাথা মোড় থেকে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের দিকে যেতে পর্যটনপাড়ার সামনের সড়কে পাথর স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। গাড়ি চলাচল করতে করতে পাথরগুলো রাস্তার মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। পাথরের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেলে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ। চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই মোটরসাইকেল স্লিপ করছে। গত সোমবার সাইফুল ইসলাম নামের এক মোটরসাইকেলচালক স্লিপ করে পড়ে গিয়ে হাঁটুতে ব্যথা পেয়েছেন বলে জানান স্থানীয় এক ব্যক্তি। নির্মাণসামগ্রীর মালিক মাসুদ রানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

কেরানীপাড়া স্টাফ কোয়ার্টারের পাশে শফিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তি বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। তিনি তাঁর নির্মাণাধীন ভবনের সামনের ফুটপাতজুড়ে বালু রেখেছেন। শফিয়ার বলেন, সড়ক থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মালামাল সরিয়ে নেওয়া হবে।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক সুলতান মিয়া বলেন, রাস্তার মধ্যে পাথর-বালু থাকায় রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এর ফলে চলাচলে দুর্ভোগ হয়। এ ছাড়া গাড়ির চাকা স্লিপ করে দুর্ঘটনাও ঘটছে।

নগরের কটকিপাড়া এলাকার একাধিক স্থানে সড়কের মধ্যে বালু স্তূপ করে রাখায় সড়ক সংকুচিত হয়ে গেছে। এই সড়ক দিয়ে শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করে। সড়কের পাশ দিয়ে হাঁটতে গেলে অনেক খুদে শিক্ষার্থী পড়ে গিয়ে ব্যথা পায় বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। সড়কে বালু রেখেছেন মাসুম হোসেন। তিনি বলেন, যত দ্রুত সম্ভব এসব নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলা হবে।

কেরানীপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই মোটরসাইকেল স্লিপ করে দুর্ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে অন্য দুর্ভোগ তো রয়েছেই। তিনি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে সড়ক থেকে এসব নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে ফেলার দাবি জানান।

সুশাসনের জন্য নাগরিক রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বলেন, এ ধরনের সমস্যা দূর করতে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বের পাশাপাশি যাঁরা বাড়িঘর নির্মাণ করছেন, তাঁদেরও সচেতন হতে হবে। তাঁদের নিজস্ব জায়গায় মালামাল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, এর আগে কয়েকবার অভিযান চালানো হয়েছে। নির্মাণসামগ্রীসহ মালামাল জব্দও করা হয়েছে। অভিযান করে চলে আসার কিছুদিন পর আবার একই অবস্থা হয়ে থাকে। তবে খুব শিগগির নতুন করে আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সিটির প্যানেল মেয়র মাহমুদ হোসেন বলেন, সিটির নির্বাচনের কারণে কিছুদিন অভিযান কম হয়েছে। তবে আবার অভিযান চালানো হবে।