ফেনীতে নেমে গেছে বন্যার পানি, আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন মানুষ

ঘর থেকে পানি সরলেও চারপাশে জমে আছে পানি। আজ সকালে ফুলগাজী উপজেলার দরবারপুর ইউনিয়নের সাতবাড়িয়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

ফেনীর অধিকাংশ এলাকা থেকে নেমে গেছে বন্যার পানি। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন বেশির ভাগ মানুষ। পানি নামার সঙ্গে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে বন্যার ক্ষত। বন্যার কারণে ১০ জুলাই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তবে আজ রোববার আবার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যার কারণে জেলার ৮৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৮ হাজার ৯৬৬ জন। এর মধ্যে ৮ হাজার ৪৫ জন গতকাল শনিবার দুপুরের আগেই আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়েন। এরপর রাতে আরও শতাধিক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়েছেন। বন্যায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কিছু মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেনীর বেশির ভাগ এলাকায় ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। তবে কিছু নিচু এলাকায় পানি জমে রয়েছে। মূলত পানি সরার মতো ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে এসব জলজট তৈরি হয়েছে। পাঁচ উপজেলায় কিছু গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এর বাইরে খাল-বিলে এখনো বন্যার পানি রয়েছে।

জেলার কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ এবং জেলা প্রশাসনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, বন্যায় পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলায় ২ হাজার ৩৫০টির বেশি মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৫৫ হেক্টর আমন বীজতলা। প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ উপজেলায় ৬৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭৫০ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া সড়ক ও অন্যান্য অবকাঠামোরও ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

সম্প্রতি টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভেঙে লোকালয় প্লাবিত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বন্যার পানি কমলেও ক্ষয়ক্ষতির কারণে মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর বসবাসের উপযোগী করতে ৮-১০ দিন সময় লাগবে। পরশুরাম পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড বাউর পাথর গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মোহাম্মদ সাইফুল বলেন, তিনি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফিরে দেখেন ঘরের বেহাল অবস্থা। টিনশেডের ঘরটির ভেতরে থাকা সব মালপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ঘর সংস্কার করার মতো প্রয়োজনীয় টাকাও তাঁর কাছে নেই। ঘরে কোমরপানি উঠেছিল বলে জানান সাইফুল ইসলাম।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কমুয়া-দক্ষিণ তারালিয়া সড়ক। আজ সকালে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকটি ইউনিয়ন থেকে বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে গেলেও এখনো দরবারপুর ও আনন্দপুর ইউনিয়নের কিছু এলাকায় পানি রয়েছে। দরবারপুর ইউনিয়নের পশ্চিম দরবারপুর সাতবাড়িয়া গ্রামের সত্তরোধ্ব৴ মো. কামাল উদ্দিন বলেন, তাঁর ঘরটি ফেনী-বিলোনিয়া পুরোনো রেললাইন–সংলগ্ন জমিতে। নিচু এলাকা হওয়ায় ঘরটি এখনো বুকপানিতে ডুবে আছে। তাঁর বাড়ি থেকে পানি পুরোপুরি সরে যেতে আরও সপ্তাহখানেক লাগতে পারে।

একই উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের কমুয়া-দক্ষিণ তাড়ালিয়া সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বন্যার পানিতে সড়কটিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং ও ইটের সুরকি উঠে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এতে যান চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। মুন্সিরহাট ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, অন্তত সাতটি স্থানে সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছোট ছোট যান চলাচল স্বাভাবিক করতে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে সড়কের পাশ থেকে মাটি দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করা হচ্ছে। একই গ্রামের অটোরিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যায় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় যাত্রী ও মালপত্র নিয়ে চলাচল করতে অসুবিধা হচ্ছে। দ্রুত সড়কগুলো মেরামত করা প্রয়োজন।

ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ইসমাইল হোসেন বলেন, ফেনীতে ৮ জুলাই থেকে বন্যা দেখা দেয়। এতে পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, দাগনভূঞা, ফেনী সদর উপজেলার ১১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এখন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে গেলেও ২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে কিছু মানুষ রয়েছেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোয় ১৬০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। বন্যাপরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কাজ করছে।