সবুজ গাছগুলো এলাকার প্রকৃতিতে নৈসর্গিক সৌন্দর্য ধরে রেখেছিল। গাছগুলো পশুপাখির ভালো আবাসস্থল ছিল। গাছের সুশীতল ছায়ায় বসে ক্লান্ত পথচারীরা স্বস্তি পেতেন। গাছগুলো দেখতেও বেশ ভালো লাগতো। কয়েক দিন আগে হঠাৎ সেই গাছগুলো উধাও। এই ঘটনা ঘটেছে খুলনা নগরের মুজগুন্নী মহাসড়কে।
সম্প্রতি ওই মহাসড়কের সড়ক বিভাজকে লাগানো শতাধিক ছোট-বড় গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। তবে ওই গাছ কাটার ব্যাপারে কিছু জানে না সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কাউন্সিলর সৌন্দর্যবর্ধনের নামে ওই গাছ কেটেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হঠাৎ এভাবে গাছ কেটে ফেলায় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। চোখের সামনে বেড়ে ওঠা গাছগুলো কেটে নিয়ে যাওয়ায় ভালো চোখে দেখছেন না তাঁরা। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, ওই এলাকার গাছের সংখ্যা খুবই কম। এভাবে গাছগুলো কেটে ফেলায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
তবে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই গাছ কাটার ব্যাপারে কেউ কিছু জানেন না। কারা গাছ কেটেছেন, তা–ও জানেন না তাঁরা। গাছ কাটার ব্যাপারে সিটি করপোরেশনে কখনো কোনো আলোচনাও হয়নি। কোনো রেজল্যুশন বা দরপত্রও আহ্বান করা হয়নি।
খুলনা সিটি করপোরেশনের ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের মধ্যে কোথাও কোনো গাছ কাটার পরিকল্পনা করা হয়নি। কারা গাছ কাটছেন, সে ব্যাপারে কিছু জানি না।’ কনজারভেন্সি শাখা ওই কাজ করছে কি না, সে ব্যাপারে তিনি খোঁজ নিতে বলেন।
জানতে চাইলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আনিসুর রহমান বলেন, তাঁরা শুধু সড়ক পরিষ্কার ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করেন। গাছ কারা কাটছেন, তা তাঁদের জানা নেই।
স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান, নতুন রাস্তা-সোনাডাঙ্গা চার লেনের মহাসড়কের (মুজগুন্নী মহাসড়ক) দৈর্ঘ্য পাঁচ কিলোমিটারের কিছু বেশি। সড়কবিভাজকের ওপর লাগানো রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ। কোনো কোনো গাছের বয়স পাঁচ-সাত বছর হয়ে গেছে। গত বুধবার ওই সড়কের নতুন রাস্তা থেকে বিজিবি স্কুল পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটারের মধ্যের ২৫টির মতো বড় গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি ছোট গাছ কেটে ফেলা হয়েছে ৮০টির মতো।
শুক্রবার বিকেলে মুজগুন্নী মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের নতুন রাস্তা মোড় থেকে বিজিবি সদর দপ্তরের মাঝের বড় গাছগুলো কেটে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় গাছের গুঁড়ি এখনো রয়েছে। তবে অধিকাংশ জায়গায় গাছ কেটে গুঁড়িও মাটির নিচ থেকে তুলে ফেলা হয়েছে। সব মিলিয়ে সড়কটি এখন বেশ ফাঁকা।
মুজগুন্নী আবাসিক এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সড়কটি দিয়ে অসংখ্যবার যাতায়াত করা হয়। আশপাশে গাছের সংখ্যা কম থাকায় সড়কবিভাজকে থাকা গাছগুলোই চোখের প্রশান্তি দিত। এখন আর তা নেই। জায়গাটিও কেমন যেন অন্য রকম লাগছে।
কারা গাছ কেটেছেন, স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা ওই এলাকার (৬ নম্বর ওয়ার্ড) কাউন্সিলর শেখ শামসুদ্দিন আহম্মেদের কথা বলেন। ওই কাউন্সিলরের নির্দেশে গাছ কাটা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
গাছ কাটার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শামসুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, কেটে ফেলা গাছের জায়গায় নতুন করে গাছ লাগানো হবে। তাছাড়া গাছগুলো বড় হয়ে যাওয়ায় সড়কবিভাজকের ক্ষতি হচ্ছিল। এ কারণে নবনির্বাচিত মেয়রের নির্দেশে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, ‘আমি ছয় মাস ধরে সিটি করপোরেশনের বাইরে রয়েছি। এ কারণে ওই গাছ কাটার ব্যাপারে কিছু জানি না।’