ময়মনসিংহে তিন প্রজন্ম ধরে মহিষের দুধের বিখ্যাত ‘সেনবাড়ির দই’
দাদা ও বাবার পরে মহিষের দুধ থেকে দই বানানোর কারিগর অন্তর কুমার দে (২৫)। প্রতিদিন চাহিদা অনুযায়ী একা হাতে দই প্রস্তুত করেন এই তরুণ কারিগর। বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন মানুষ তাঁর হাতে বানানো দই খেতে আসেন, কিনে নিয়ে যান। ময়মনসিংহের ত্রিশালের সেনবাড়ি বাজারে মহিষের দুধের দই বানানোর এ কর্মযজ্ঞ চলছে প্রায় ছয় দশক ধরে।
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কানিহারি ইউনিয়নের আহম্মদবাড়ি এলাকাটি স্থানীয়দের কাছে সেনবাড়ি নামেই বেশি পরিচিত। স্থানীয় সত্তরোর্ধ্ব রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানের গ্রামগুলো ব্রহ্মপুত্র নদের কাছাকাছি। এখানে গ্রামের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই মহিষ পালন করতেন। তবে এখন অনেকটা কমতে শুরু করেছে। এখানকার মহিষের দুধ থেকেই তৈরি হয় সেনবাড়ির দই নামে পরিচিতি পাওয়া বিখ্যাত দই।’
গত শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ত্রিশাল-গফরগাঁও সড়ক থেকে আহাম্মদবাড়ি বাজারে প্রবেশ করতেই প্রাচীন বটগাছের দেখা মেলে। দেখা গেল, গ্রামের মানুষ দুধ নিয়ে বাজারে আসছেন। অনেকে দই বানানোর দোকানে দুধ দিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ গোয়ালার কাছে দুধ বিক্রি করছেন।
সেনবাড়ি বাজারে গিয়ে কথা হয় অন্তর কুমার দের সঙ্গে। তাঁদের চন্দন দই হাউস অ্যান্ড সুইটস নামের প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন সকালে দুধ কিনে নিজ হাতে দই প্রস্তুত করেন অন্তর।
পূর্বপুরুষের ব্যবসা ধরে রাখা এই ব্যবসায়ী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ এলাকায় অনেক মহিষ রয়েছে। মহিষের দুধ দিয়ে মিষ্টি হয় না, সন্দেশও ভালো হয় না। তাই আমরা পূর্বপুরুষের হাত ধরে দই বানিয়ে ভালো ব্যবসা করছি। ত্রিশালসহ আশপাশের এলাকায় এর বেশ চাহিদা রয়েছে।’
দই তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে অন্তর জানান, দুধ প্রথমে ছেঁকে প্রক্রিয়াজাত করে জ্বাল দেন। দুধ ঠান্ডা হয়ে এলে আগে থেকে রাখা অল্প দই দিয়ে পাতিলে রেখে দেন ৪-৫ ঘণ্টা। এর মধ্যেই হয়ে যায় দই। পরে এগুলো ফ্রিজে রেখে বিক্রি করা হয়।
অন্তর কুমার দে জানালেন, তিনি প্রতিদিন এক মণ দুধের দই তৈরি করেন। চাহিদা অনুযায়ী ২-৩ মণ দুধেরও দই করা হয়। তাঁর দোকানে দইয়ের বড় হাঁড়ি বিক্রি হয় ৩৫০ টাকায়, আর ছোট হাঁড়ির দাম ২২০ টাকা। কেউ চাইলে ২০ টাকা কাপও দই খেতে পারেন তাঁদের দোকানে।
অন্তরের দাদা ধরণী চন্দ্র দের হাত ধরে অন্তত ৬০ বছর আগে মহিষের দুধের দই তৈরি শুরু হয় এখানে। পরে অন্তরের বাবা চন্দন চন্দ্র দে এই ব্যবসা শুরু করেন। চন্দন দে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকায় আমরাই প্রথম মহিষের দুধে দই বানানো শুরু করি। বাবার পরে আমি, এখন আমার সন্তানেরা করছে।’
কানিহারি গ্রামের বাসিন্দা তাহের আলী বলেন, ‘আমাদের এলাকাটি মহিষের দুধের দইয়ের জন্যই বিখ্যাত। দূরদূরান্তের মানুষ এখান থেকে এসে দই কিনে নেন।’