ছয় দশক ধরে জিবে জল আনে রংপুরের যে গুড়ের জিলাপি

রংপুরের নবাবগঞ্জ বাজারে ৬৩ বছরের ঐতিহ্যবাহী মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের গুড়ের জিলাপির কদর এখনো আছেছবি: প্রথম আলো

রংপুরের নবাবগঞ্জ বাজারের মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের গুড়ের জিলাপির বেশ সুনাম। ৬৩ বছর ধরে বাজারে আছে এ জিলাপি। এখানকার জিলাপি একসময় বাঁশের খাঁচায় বিক্রি হতো। স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে মিষ্টি হিসেবে জিলাপির খাঁচাই থাকত। দেশ স্বাধীনের আগে এ জিলাপি প্রতি কেজি বিক্রি হতো ৫০ পয়সায়। এখন তা ১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী ছিলেন শালবন এলাকার বাসিন্দা আবুল কাশেম। তিনি মারা যাওয়ার পর তাঁর চার ছেলের মধ্যে দুই ছেলে ব্যবসা দেখতেন। তাঁদের মৃত্যুর পর বাকি দুই ভাই বাবার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গুড়ের জিলাপির ব্যবসার হাল ধরেছেন।

ওই দুজনের একজন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক কর্মী জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ১৯৬০ সালে তাঁর বাবা আবুল কাশেম এ মিষ্টান্ন ভান্ডার প্রতিষ্ঠা করে গুড়ের জিলাপি বিক্রি চালু করেন। বাবা মারা যাওয়া পর তাঁরা ভাইয়েরা ব্যবসা দেখে আসছেন। ময়দা ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে তার সঙ্গে টক দই দিয়ে খামির করা হয়। গুড়ের রসের মধ্যে ডুবিয়ে বানানো হয় জিলাপি। মানুষের রুচি ও খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন এলেও এখনো প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ মণ জিলাপি বিক্রি হয়ে থাকে।

ময়দা ও চালের গুঁড়া মিশিয়ে তার সঙ্গে টক দই দিয়ে জিলাপির খামির করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

নগরের দূরদূরান্ত থেকে এসে জিলাপি কিনে নিয়ে যান লোকজন। মিলাদ মাহফিলসহ নানা অনুষ্ঠানে এখনো এ জিলাপির কদর আছে। নগরের মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় দল বেঁধে বন্ধুরা এ জিলাপির দোকানে গুড়ের জিলাপি খেতে যেতাম। জিলাপির স্বাদ, কী মজা! মাঝেমধ্যে এখনো শখ করে যাই জিলাপি খেতে।’

নগরের পালপাড়া এলাকার বাসিন্দা রণজিৎ দাস বলেন, ‘এই জিলাপির জন্য জায়গার নাম হয়ে ওঠে জিলাপিপট্টি। জিলাপিটার স্বাদই আলাদা। গুড়ের জিলাপি এখন অনেক দোকানে তৈরি করা হলেও মুসলিম মিষ্টান্ন ভান্ডারের গুড়ের জিলাপির তুলনা হয় না।’

মানুষের রুচি ও খাবারের অভ্যাসে পরিবর্তন এলেও এখনো প্রতিদিন এই দোকানের চার থেকে পাঁচ মণ জিলাপি বিক্রি হয়
ছবি: প্রথম আলো

এ জিলাপির দোকানের প্রধান কারিগর মনির উদ্দিন। তিনি বলেন, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে এখানে এসে কাজ শুরু করেন। তখন দোকানের ধোয়া-মোছা ও কারিগরের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। সেই কাজ করতে করতে এখন তিনি জিলাপি বানানোর প্রধান কারিগর। বর্তমানে তাঁর বয়স ৫৭ বছর। তিনি বলেন, ‘এখানকার মায়ার জালে জড়িয়ে পড়েছি। আগে জিলাপির কত না কদর ছিল! রংপুরের বাইরে থেকে এসেও এখানে বসে জিলাপি খেতেন মানুষজন, আবার কেউ খাঁচায় ভরে জিলাপি নিয়ে যেতেন আত্মীয়বাড়িতে। এখন দোকানে বসে খাওয়ার চেয়ে বাইরের অর্ডারই বেশি আসে।’