মাদারীপুরে হত্যা মামলায় তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

প্রতীকী ছবি

মাদারীপুরে মোটরসাইকেলচালক শাহাদাৎ ঘরামী (১৮) হত্যা মামলায় ১০ বছর পর তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আজ সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক লায়লাতুল ফেরদৌস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন বরিশালের গৌরনদীর রামনগর এলাকার সুলতান শরিফের ছেলে সেন্টু শরীফ (৩৫), কমলাপুর এলাকার মান্নান ফকিরের ছেলে মিরাজ ফকির (৩০) ও মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর এলাকার মৃত জিন্নাত শেখের ছেলে ফজেল শেখ (৫০)।

মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্র জানায়, গৌরনদী উপজেলার বড় দুলালী এলাকার মোকসেদ ঘরামীর ছেলে শাহাদাৎ ঘরামী ভাড়ায় একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গৌরনদীর বার্থী এলাকায় যাওয়ার কথা বলে শাহাদাৎকে ভাড়ায় নেন প্রতিবেশী মিরাজ ও সেন্টু। পরে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি শেষে শাহাদাৎকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাঁর মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেন। পরে ছিনতাইকারীরা লাশটি তাঁদের আত্মীয় ফজেল শেখের মাধ্যমে মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের সিকি-নওহাটা এলাকার একটি জমিতে ফেলে রেখে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় দুদিন পর নিহত শাহাদাৎ ঘরামীর বাবা মোকসেদ ঘরামী বাদী হয়ে মিরাজ ফকির, সেন্টু শরীফসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে সদর থানার পুলিশের উপপরিদর্শক শ্যামলেন্দু ঘোষ তদন্তের পর ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তিনজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। এরপর আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। পরে বিচারিক আদালতে দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তিতর্ক শেষে উপযুক্ত সাক্ষী প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন। তবে আসামিরা পলাতক থাকায় রায় ঘোষণার সময় কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

মামলার বাদী মোকসেদ ঘরামী বলেন, ‘ছেলেকে মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না আমার। ও (শাহাদাৎ) একজনের কাছ থেকে প্রতিদিন আড়াই শ টাকা ভাড়া দেওয়ার চুক্তিতে মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে পরিবারের হাল ধরেছিল। সেন্টু, মিরাজ আর ফজেল মোটরসাইকেলটি ছিনতাই করে ধরা পড়ার ভয়ে আমার ছেলেকে খুন করে। আজ আদালত ওদের ফাঁসির রায় দিয়েছে, আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট। তবে একটাই দাবি, এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়।’

মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. সিদ্দিকুর রহমান সিং প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি একটি নৃশংস হত্যা মামলা। আসামি মিরাজকে গ্রেপ্তার করে আদালতে আনা হলে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। দীর্ঘ ১০ বছর যুক্তিতর্ক শেষে আদালত এ মামলায় তিনজনকে অভিযুক্ত করে ফাঁসির আদেশ দেন। আমরা রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ে সন্তুষ্ট।’