১৫ দিন ধরে নিখোঁজ ছেলে, থানায় থানায় ঘুরে হয়রান পরিবার

২৫ জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ আহসান হাবিব
ছবি: সংগৃহীত

‘আমার ছেলে মা-বাপ ছাড়া কিছু বোঝে না। আজকে ১৫টা দিন হলো, ছেলেটার কথা শুনতে পাই না। ছেলের কিছু হলে মায়ের কী হয়, সবাই জানে এটা। একটু চেষ্টা করে তোমরা দেখো। আমার ছেলেকে এনে দাও।’

মুঠোফোনে কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার ময়না বেগম। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে তাঁর ছেলে আহসান হাবিব ওরফে আশিক (২৪) কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থেকে নিখোঁজ হন। এরপর ভেড়ামারাসহ অন্তত চারটি থানায় ঘুরেছে পরিবারটি। কিন্তু কোথাও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নেয়নি বলে পরিবারটির অভিযোগ। ২৮ জানুয়ারি নাটোর সদর থানা আহসান হাবিবের মোটরসাইকেল নাটোর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আহসান হাবিব পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুরিয়া ইউনিয়নের জামিরা গ্রামের আব্দুল আলেকের ছেলে। দুই ভাই–বোনের মধ্যে তিনি ছোট। পড়েন বানেশ্বর সরকারি কলেজে স্নাতক (পাস) দ্বিতীয় বর্ষে। প্রায় ২১ মাস ধরে আহসান হাবিব ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের (আরএফএল ভিশন ইলেকট্রনিকস) কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শাখায় কর্মরত ছিলেন। অসুস্থ বাবা আলেক প্রায় পাঁচ বছর ধরে কাজ করতে পারেন না। আহসান হাবিবই পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁকে হারিয়ে পরিবারটি দিশাহারা।

আহসান হাবিবের বোন মুস্তাহিদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাই পড়াশোনার পাশাপাশি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আরএফএল ভিশনে চাকরি নেন। দুই মাস পরপর বাড়িতে আসতেন। পরিবারের সঙ্গে প্রায় দিনই ফোনে কথা হয়। হঠাৎ ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তাঁর অফিস থেকে ফোন করে জানতে চায় হাবিব বাড়ি ফিরেছে কি না। তারপর থেকে তাঁর ভাইকে সবাই মিলে খুঁজছেন।

এ বিষয়ে ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শাখার ব্যবস্থাপক শফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি ধরেননি।

মুস্তাহিদা জানান, ভাইকে না পেয়ে তাঁরা গত ২৭ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় গিয়েছিলেন তাঁরা। ভেড়ামারা থানায় জিডি করতে চান, কিন্তু পুলিশ জিডি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তাঁরা পুলিশ সুপারের সঙ্গেও দেখা করেন। এরপর একই থানায় ২ ও ৪ ফেব্রুয়ারি যান। কিন্তু থানা-পুলিশ জিডি নেয়নি। এর মধ্যে তাঁরা রাজশাহীর বেলপুকুর, পুঠিয়া ও নাটোর থানায় জিডি করতে যান, তারাও জিডি নেয়নি।

আহসান হাবিবের সন্ধান না পেয়ে তাঁর অসুস্থ বাবা আবদুল আলেক দিশাহারা। মা ময়না বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘থানা থেকে আমাকে এমন করে বের করে দিল। এভাবে কেউ কাউকে বের করে দেয় না। আমি আমার ছেলেকে চাই। আমার ছেলে অন্যায় করতে পারে না।’

যোগাযোগ করা হলে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম জানান, পরিবারের সদস্যরা থানায় এসেছিলেন। তাঁদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে লালনশাহ সেতুর টোল দিয়ে আহসান হাবিব রাজশাহীর দিকে যাচ্ছেন। এ কারণে থানায় এ বিষয়ে তাঁরা জিডি নেননি।

ভেড়ামারা থানার ওসির আরও বলেন, আহসান হাবিবের বিষয়ে তাঁর কোম্পানি থেকে অর্থ আত্মসাতের একটি অভিযোগ করেছে। কোম্পানির অভিযোগ, তিনি টাকা আত্মসাৎ করে আত্মগোপনে আছেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরা নাটোর থেকে একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছেন। সেটি তাদের হেফাজতে রয়েছে। কিন্তু নিখোঁজ ব্যক্তির জিডির বিষয়ে যে এলাকা থেকে ওই ব্যক্তি নিখোঁজ হয়েছেন, সেখানেই সংশ্লিষ্ট থানায় যোগাযোগ করতে হবে। তারাই এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।