সাহায্য চাওয়ার পর মেয়েটিকে একে একে ধর্ষণ করেন পাঁচজন

দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মো. রাজু ও সাইফুল ইসলাম (৪৮)
ছবি: সংগৃহীত

বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে নির্জন বাগানে নিয়ে স্কুলছাত্রীকে (১৬) ধর্ষণ করেন কথিত প্রেমিক মো. হাসান (২৫)। সামান্য দূরে মোটরসাইকেল নিয়ে পাহারায় ছিলেন হাসানের বন্ধু মো. রাজু (১৯)। ধর্ষণের পর হাসান বাগানের বাইরে রাস্তায় কেউ আছে কি না দেখতে যান। তখন হাসানকে দেখে ফেলেন স্থানীয় মো. সবুজ (৩০) নামের এক যুবক। তিনি কৌতূহল নিয়ে বাগানে ঢুকে তাঁরা বাগানে কী করছিলেন, তা ওই ছাত্রীর কাছে জানতে চান। অপরিচিত যুবকের উপস্থিতি দেখে মোটরসাইকেলে সেখান থেকে পালিয়ে যান হাসান ও রাজু।

কথিত প্রেমিক পালিয়ে যাওয়ার পর সবুজের কাছে সাহায্য চায় মেয়েটি। তখন সবুজ সাহায্য না করে উল্টো কুপ্রস্তাব দেন মেয়েটিকে। কিন্তু মেয়েটি রাজি না হওয়ায় তাঁকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মুঠোফোনে পাশের এলাকার আমিনুল ইসলাম ওরফে ডিপজল (২৭) ও শ্রী অমরকে (৩৫) ডেকে আনেন। আমিনুল ও অমরকে তাড়াহুড়া করে বাগানে যেতে দেখে তাঁদের পিছু নেন সাইফুল ইসলাম (৪৮) ও নজরুল ইসলাম (৪০)। পরে তাঁরা পাঁচজন একত্রিত হয়ে একে একে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন। ধর্ষণ শেষে বাগানের বাইরে রাস্তায় এনে মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে তাঁরা পালিয়ে যান।

আরও পড়ুন

ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. রাজু ও সাইফুলের আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর জবানবন্দির বরাত দিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আটোয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. দুলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান। গত সোমবার আদালতে গ্রেপ্তার দুই আসামি ও ভুক্তভোগী ছাত্রী জবানবন্দি দেয়।

দুলাল উদ্দিন জানান, ঘটনার দিন গত শনিবার বিকেলে তেঁতুলিয়া থেকে বাসে পঞ্চগড় শহরে আসে মেয়েটি। মোটরসাইকেলে শহরে যাওয়ার পথে বন্ধু রাজুকে সঙ্গে নেন মেয়েটির কথিত প্রেমিক হাসান। এ সময় প্রায় দুই ঘণ্টা শহরে হাসানের জন্য অপেক্ষা করছিল মেয়েটি। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে হাসান ও রাজু মেয়েটিকে মোটরসাইকেলে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সন্ধ্যার পর জেলার আটোয়ারী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা পুরাতন আটোয়ারী-বন্দরপাড়া এলাকার নির্জন বাগানে নিয়ে যান।

আরও পড়ুন

দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পরদিন ওই স্কুলছাত্রীর বাবা ধর্ষণের অভিযোগে আটোয়ারী থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে সাত আসামির নাম-ঠিকানা নিশ্চিত হয়। রোববার আটোয়ারীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. রাজু (১৯) ও সাইফুল ইসলামকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের মালগোবা এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান (২৫), একই ইউনিয়নের ফুতেপুর এলাকার সবুজ (৩০), পুরাতন আটোয়ারী এলাকার আমিনুল ইসলাম ওরফে ডিপজল (২৭), শ্রী অমর (৩৫) ও নজরুল ইসলাম (৪০)। বর্তমানে পাঁচ আসামি পলাতক।

সরেজমিন দেখা গেছে, পুরাতন আটোয়ারী-বন্দরপাড়া এলাকায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কাজী অ্যান্ড কাজী টি এস্টেটের চা–বাগান। চা–বাগানের পাশেই ঔষধি গাছের আরেকটি বাগান। বাগানের আশপাশে বাড়িঘর না থাকায় দিনের বেলায়ও জনমানবহীন। বাগানের আশপাশে কোলাহলমুক্ত হওয়ায় মানুষ সেখানে ঘুরতে যায়। তবে সঙ্গে নারী থাকলে ছিনতাইসহ নির্যাতনের শিকার হন অনেকে। স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে যুক্ত হওয়া ব্যক্তিরাও এসব কাজে জড়িত থাকতেন বলে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রথম দিকে তাঁরা শুধু আসামিদের নাম পেয়েছিলেন। তদন্ত করে তাঁদের পুরো ঠিকানা বের করা হয়। কথিত প্রেমিক হাসানসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষার প্রতিবেদন, আলামত পরীক্ষার জন্য পাঠানো, ডিএনএ টেস্টসহ সবকিছুই প্রক্রিয়াধীন।

মুঠোফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে হাসানের সঙ্গে ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে হাসান ওই মেয়েকে গত শনিবার পঞ্চগড় শহরে ডেকে আনেন। পরে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয় ওই স্কুলছাত্রী।