আয় ও সম্পদ বেড়েছে শাহীন আক্তারের আর তাঁর স্বামী বদির

আবদুর রহমান বদি, শাহীন আক্তারছবি: সংগৃহীত

কক্সবাজার–৪ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের নগদ টাকা, ব্যাংকে জমা টাকা, বাড়ি, সোনা ও অকৃষিজমির পরিমাণ বেড়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা গেছে।

পাঁচ বছর আগে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শাহীন আক্তারের নামে অকৃষিজমি ছিল না। ছিল না কোনো বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট। এখন তাঁর অকৃষিজমির পরিমাণ ২ দশমিক ৮৩ একর। আছে ২০ লাখ ৩ হাজার টাকা দামের ২টি দালান। পাঁচ বছর আগে শাহীন আক্তারের নগদ টাকা ছিল ৫ লাখ টাকা, আর ব্যাংকে জমা ছিল ১০ হাজার টাকা। সোনা ছিল ১৫ ভরি। নিজের ছিল না কোনো গাড়ি। এখন তাঁর নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার। ব্যাংকে জমা আছে ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩২ টাকা। আছে ৯১ লাখ টাকা দামের একটি জিপ গাড়ি। সোনাও আছে ৪০ ভরি।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী শাহীন আক্তারের কৃষি খাতে আয় ছিল ১৮ হাজার ২২৫ টাকা। বাড়ি ও দোকানের ভাড়া হিসেবে পেতেন ৫৬ হাজার ৯৮০ টাকা। ব্যবসা থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় হতো। লবণমাঠ লাগিয়ত থেকে ৪৬ হাজার ৬০০ টাকা পেতেন তিনি।

দ্বাদশ নির্বাচনে হলফনামায় কৃষি খাত আয় দেখানো হয় ১৯ হাজার ৪৪০ টাকা। বিএ পাস শাহীন আক্তার হলফনামায় উল্লেখ করেন, তাঁর নগদ টাকা ৫০ হাজার। বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে তিনি পান ২ লাখ ৭ হাজার ৮৫৭ টাকা। লবণমাঠ থেকে আয় হয় ৪৯ হাজার ৪০০ টাকা।

হলফনামায় ক্ষমতার পাঁচ বছরে ভোটারদের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করার নিয়ম থাকলেও ঘর খালি রাখেন শাহীন আক্তার।

এই সময়ে তাঁর স্বামী ও একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির আয় ও সম্পদ বেড়েছে অনেক। পাঁচ বছর আগে বদির নগদ টাকা ছিল ৩০ লাখ। ব্যাংকে জমা ছিল ৫০ লাখ টাকা। বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত বিনিয়োগ ছিল ২০ লাখ টাকা। ছিল ১ কোটি ৫৭ লাখ ৯০ হাজার ২৭২ টাকা দামের ১টি কার, ২টি জিপ গাড়ি।

এখন বদির নগদ টাকা আছে ১ কোটি। ব্যাংকে জমা আছে ৩ কোটি। ১ কোটি ৯০ লাখ ৯০ হাজার ২৭২ টাকার ১টি কার, ২টি জিপ ও ১টি কার্গো ট্রাক রয়েছে তাঁর।

এ ছাড়া বদির ৩ কোটি ৪০ লাখ ৯৮ হাজার ৫০৪ টাকা দামের ১৯ দশমিক ৪৭৫৯ একর কৃষিজমি ছিল পাঁচ বছর আগে। এখন কৃষিজমি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১৩ একরে। তবে বেড়েছে অকৃষিজমি। আগে অকৃষিজমি ছিল ২৫ দশমিক ৮৩ শতক। এখন অকৃষিজমি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৯ একর।

পাঁচ বছর আগে ৬৪ লাখ ৭৭ হাজার ১০৬ টাকা দামের আধা পাকা বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ছিল তাঁর। এখন তাঁর ১ কোটি ৯১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৭৮ টাকা দামের ৬টি দালান রয়েছে। এ ছাড়া ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ টাকা দামের ২টি বাড়ি-অ্যাপার্টমেন্ট আছে তাঁর।

গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুর রহমান বদি। দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বদির পরিবর্তে তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বদির নাম রয়েছে। তালিকায় গডফাদার হিসেবে আছেন বদির চার ভাইসহ পরিবারের অন্তত ২৬ জনের নাম।

এ প্রসঙ্গে বদি বলেন, তালিকায় নাম থাকলেও তিনি মাদক ব্যবসায় জড়িত, কিংবা মাদক ব্যবসায়ী থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়েছেন—এমন প্রমাণ নেই। টেকনাফ স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য করে তিনি সম্পদের মালিক হয়েছেন। সর্বোচ্চ করদাতা নির্বাচিত হয়ে আসছেন।