চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিলে বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে অনশন

বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন রুমেল। আজ সকালে বগুড়া শহরের সাতমাথায়
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম থেকে জনবল প্রত্যাহারসহ ভেন্যু বাতিলের প্রতিবাদে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন শুরু করেছেন এক যুবক। আজ রোববার সকাল নয়টা থেকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় বগুড়া জিলা স্কুলসংলগ্ন ফুটপাতে বসে মো. রুমেল নামের ওই যুবক কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন করছেন।

মো. রুমেল বগুড়া সদর এলাকার বাসিন্দা ও ইউটিউবে কনটেন্ট বানান। তবে অনশনে তিনি নিজেকে ক্রিকেটভক্ত বলেই পরিচয় দিলেন। শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের ভেন্যু বাতিলের বিষয়ে বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত এ অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

বগুড়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সঙ্গে দ্বন্দ্বে স্টেডিয়ামের মূল মালিক জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) কাছে স্টেডিয়ামটি হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবি। গত বৃহস্পতিবার এনএসসি সচিব বরাবর পাঠানো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। ওই দিনই শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে কর্মরত বিসিবির ১৭ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বগুড়া থেকে প্রত্যাহার করে মিরপুরে বিসিবির কার্যালয়ে রিপোর্ট করতে বলা হয়। এ ছাড়া স্টেডিয়ামে থাকা রোলার, সুপার সপার, পিচ কাভারসহ মাঠ ও খেলার যাবতীয় সরঞ্জাম এবং ড্রেসিংরুমের আসবাব ঢাকায় নিয়ে গেছে বিসিবি। এ ঘটনার পর বগুড়া খেলোয়াড়, দর্শক ও ক্রীড়াসংগঠকসহ সাধারণ মানুষ বিসিবির এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

আজ সকাল ১০টার দিকে শহররে সাতমাথা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, গায়ে কাফনের কাপড় পরে ফুটপাতে বিছানা পেতে অনশনে বসেছেন রুমেল। তাঁর পেছনে টানানো ব্যানারে লেখা ‘বগুড়া জেলার উন্নয়ন এবং বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম ভেন্যু (ক্রিকেট) বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশন’। বুকে ঝুলানো প্ল্যাকার্ডেও এই বার্তা লেখা। অনশনরত এই যুবককে দেখতে অনেকেই তাঁর চারপাশে ভিড় করেছেন।

জানতে চাইলে রুমেল বলেন, বগুড়াবাসী দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। এই সরকারের সময় এখানে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। তবুও সান্ত্বনা ছিল, একটা স্টেডিয়াম আর বিমানবন্দর আছে। একসময় এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতো। কিন্তু ১৬ বছর ধরে এখানো আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় না। গত বৃহস্পতিবার বিসিবি তাদের জনবল ও খেলার সরঞ্জাম প্রত্যাহার করেছে। খেলার মাঠে একটা দড়ি ছিল, সেই দড়িও তারা নিয়ে গেছে। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্টেডিয়ামের মৃত্যু হয়েছে। বিমানবন্দরও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হয় না। তাহলে এখানে আর কী অবশিষ্ট থাকল।

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে রুমেল বলেন, ‘আমি সাধারণ নাগরিক। আমার কোনো কিছু করার সামর্থ্য নেই। তবে দাবি জানানোর অধিকার আছে। এ কারণে স্টেডিয়াম ও বিমানবন্দর চালুর দাবি আদায়ে জীবন উৎস্বর্গ করতে আমরণ অনশনে বসেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চলবে। বগুড়াবাসীর দাবি আদায়ে প্রয়োজনে জীবন দিয়ে দেব।’

এর আগে বিসিবির এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল শনিবার শহরের সাতমাথায় বগুড়াবাসী ব্যানারে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে চলমান প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের খেলায় অংশ নেওয়া খেলোয়াড়েরাও বিসিবির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।

২০০৬ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ভেন্যুর মর্যাদা পায় বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম। পরের মাসেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেকও হয়ে যায় ওই সময়ে দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়ামটির। কিন্তু ওই বছরেরই ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে চলে যায় স্টেডিয়ামটি। ২০০৬ সালের পর থেকে এখানে আন্তর্জাতিক ম্যাচ না হলেও জাতীয় লীগ, যুব ক্রিকেট লিগ, প্রিমিয়ার ও প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ এবং করপোরেট লিগের ম্যাচ হয়েছে এ মাঠে। এ ছাড়া হয়েছে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পও।