দেশে দুর্ভিক্ষের মতো কোনো পরিস্থিতি হবে না: কৃষিমন্ত্রী

বরিশালে কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। বুধবার দুপুরে নগরে শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে
প্রথম আলো

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপ-আমেরিকার মতো ধনী দেশগুলোতেও ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি চলছে। বাংলাদেশে তার কিছু প্রভাব পড়েছে। কিন্তু শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে অন্য দেশের চেয়ে আমরা অনেক ভালো আছি। কিছু সমস্যা আছে, তবে দেশে দুর্ভিক্ষের মতো কোনো পরিস্থিতি হবে না। অচিরেই আমরা সংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হব।’

আজ বুধবার দুপুরে বরিশালে এক কর্মশালায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী। ‘বিদ্যমান শস্যবিন্যাসে তৈল ফসলের অন্তর্ভুক্তি এবং ধান ফসলের অধিক ফলনশীল জাতসমূহের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক ওই কর্মশালায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষক, কৃষিবিজ্ঞানীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা অংশ নেন।

কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছে। বিএনপি যদি মনে করে দেশের মানুষ বোকা, তবে তারা এখনো বোকার স্বর্গের বাসিন্দা। বিশ্বের বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতি সম্পর্কে দেশের মানুষ জানে। তাই বিএনপির ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই থেকে যাবে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি এ আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে। এ জন্য আগামী তিন বছরে ভোজ্যতেল আমদানি ৪০ ভাগ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি।’

বরিশাল নগরের বান্দরোডে শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় এ কর্মশালা শুরু হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. আমিন উল আহসান, কৃষি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক দেবাশীষ সরকার, বিএডিসির চেয়ারম্যান হায়াতুল্লাহ এবং বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. জসীম উদ্দীন হায়দার। কর্মশালায় বরিশাল ও খুলনা অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ ও উৎপাদন বৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে পৃথক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বরিশাল অঞ্চলের একসময় শস্যভান্ডারের খ্যাতি ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই খ্যাতি হারিয়ে গেছে। আমরা সেই খ্যাতি আবার পুনরুদ্ধার করতে চাই। এরই মধ্যে এ অঞ্চলে ধানের উৎপাদন অনেক বেড়েছে। দেশের ৬০ শতাংশ মুগ ডাল এ অঞ্চলে উৎপাদিত হয়। তরমুজ, খেসারি উৎপাদনেও এ অঞ্চল এগিয়ে। শস্যের নিবিড়তা ও বহুমুখীকরণের মধ্য দিয়ে আবার এ খ্যাতি ফিরে আসতে শুরু করেছে।’

এ অঞ্চলে কৃষির ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি হয়। আমরা চাচ্ছি এ আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে। এ জন্য আগামী তিন বছরে ভোজ্যতেল আমদানি ৪০ ভাগ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে আমরা মাঠে নেমেছি। বরিশাল অঞ্চলে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার মতো সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার কৃষকদের আত্মবিশ্বাস, বুদ্ধিমত্তা, উৎসাহ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। এরই মধ্যে এ অঞ্চলে সূর্যমুখী, শর্ষে, তিল, তিসি ও বাদামের উৎপাদন বেড়েছে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে এটা আরও বহুগুণ বাড়ানো। এ জন্য কী করা দরকার, সে বিষয়ে সবার মতামত নিয়ে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে।’