নাটোরের উত্তরা গণভবনের বাহারি ফুল, পাখির কলতানে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা
ফুলে ফুলে সেজেছে নাটোরের উত্তরা গণভবন প্রাঙ্গণ। ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে বাহারি রঙের ফুল। অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ ফুলের সঙ্গে ছবি ও ভিডিও ধারণে ব্যস্ত। পরিযায়ীসহ হাজারো পাখির কলতানে মুখর চারপাশ। নানা প্রজাতির ফুল জানান দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনী বার্তা।
বাগানে ঘুরতে ঘুরতে আলাপ হয় নাটোর শহরের বড়গাছা থেকে আসা আশরাফ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই শহরের বাসিন্দা হলেও আমি শীতের সময় প্রতি সপ্তাহে উত্তরা গণভবনে আসি। এ সময় ফুলের মিষ্টি গন্ধে সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এর সঙ্গে বাড়তি আনন্দ দেয়, শত শত পরিযায়ী পাখির আগমন। শীতের সকালে পাখিরা গণভবনের ভেতরের লেকে ও পুকুরে ঘুরে বেড়ায়। সন্ধ্যার আগ দিয়ে কিচিরমিচির শব্দে আকাশ–বাতাস মুখর হয়ে ওঠে। এই দৃশ্য যে দেখেনি, তাকে লিখে বোঝানো কষ্টসাধ্য, হয়তো অসম্ভব।’
১৮৯৭ সালের গ্রেট এশিয়ান ভূমিকম্পে রাজবাড়িটির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১২ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রশিল্পীদের পরামর্শে ৪১ একর জমির ওপর রাজবাড়িটি আবার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
উত্তরা গণভবনের ইতিহাস ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৭৩৪ সালে দেওয়ান দয়ারাম রায় দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৭ সালের গ্রেট এশিয়ান ভূমিকম্পে রাজবাড়িটির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে ১২ বছর ধরে বিদেশি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী ও চিত্রশিল্পীদের পরামর্শে ৪১ একর জমির ওপর রাজবাড়িটি আবার প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজবাড়ির চত্বরে খণ্ড খণ্ড বেশ কয়েকটি দেশি-বিদেশি ফুল ও ফলের বাগান করা হয়। এর মধ্যে রাজপ্রাসাদের উত্তর আঙিনায় গড়ে তোলা হয় বিখ্যাত ইটালিয়ান গার্ডেন। যেখানে দুর্লভ ফুলের গাছ আছে। কালের বিবর্তনে অনেক গাছ হারিয়ে গেলেও নতুন নতুন ফুলের গাছও সংযোজন হয়েছে।
উত্তরা গণভবনের মালি আনোয়ার হোসেন বলেন, দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে সারা বছরের জন্য উত্তরা গণভবন সাজিয়ে রাখা হয়। তবে শীতের সময় সৌন্দর্যটা আরও বেড়ে যায়। এবার প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রায় ২২ হাজার নতুন ফুলের চারা রোপণ করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরা গণভবনের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে সারি সারি গাঁদা ফুল। এসব ফুল যেন দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানোর জন্য প্রস্তুত। কিছুটা সামনে এগোলেই চোখে পড়ল বিশালাকৃতির লোহার কামান (যুদ্ধাস্ত্র)। এই কামান ঘিরে ফুটেছে নানা জাতের ফুল। এর ঠিক ডান পাশের মাঠে তাকাতেই চোখ স্থির হয়ে গেল। নানা রঙের হাজারো গাঁদা ফুটে। সেখান থেকে রাজপ্রাসাদ ঘুরে সরু ফটক পেরিয়ে ইটালিয়ান গার্ডেনে ঢুকতে চোখে পড়ল বিচিত্র সব গাছগাছালি। মাঝখানে সুন্দর করে সাজানো ফুলবাগান। বাগানের মাঝেমধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সাদা মার্বেল পাথরের কয়েকটি ভাস্কর্য।
‘মাদার্স’ খ্যাত ভাস্কর্যে এক শিশু তার মায়ের আঁচল টানার দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এই বাগানে আছে রাজ-অশোক, সৌরভী, পারিজাত, হাপারমালি, কর্পূর, হরীতকী, যষ্টিমধু, মাধবী, তারাঝরা, মাইকাস, নীলমণি লতা, হৈমন্তীসহ দুর্লভ প্রজাতির গাছগাছড়া। এখান থেকে দক্ষিণের পুকুরঘাট অবধি পর্যন্ত আছে বেশ কিছু দেশীয় জাতের ফুলের বাগান।
উত্তরা গণভবন এখন পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র। দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে উত্তরা গণভবনকে ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ঘুরতে আসা কলেজছাত্রী ফারহানা বেগম বলেন, ‘আগেও আমি এখানে এসেছি। তবুও বারবার এ সময় এখানে আসতে মন চায়। এখানকার ফুল-পাখির সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। তাই বছরে অন্তত একবার আসি।’
জানতে চাইলে নাটোরের জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভূঁঞা বলেন, উত্তরা গণভবন এখন পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্র। দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে উত্তরা গণভবনকে ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে। হয়তো দর্শনার্থীরা ঘুরে ফিরে বছরে একবার হলেও এখানে ছুটে আসেন।