গাড়ি চালিয়ে ফিরছিলেন বাড়ি, পথে মোটরসাইকেল নিয়ে ধাওয়া, ‘অসুস্থ হয়ে’ চিকিৎসকের মৃত্যু

মো. নাজমুল হাসান আখন্দছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা শেষে কুমিল্লার বাসায় ফেরার পথে মো. নাজমুল হাসান আখন্দ নামের এক চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের ভাষ্য, বুধবার নাজমুল হাসান কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে প্রাইভেট কার চালিয়ে কুমিল্লার বাসায় ফিরছিলেন। ফেরার পথে বেলা তিনটার দিকে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বিজরা এলাকায় কয়েকজন উচ্ছৃঙ্খল মোটরসাইকেলচালক তাঁকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে তাঁর গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে দেন তাঁরা। এ ঘটনায় আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে তিনি মারা যেতে পারেন।

চিকিৎসক মো. নাজমুল হাসান আখন্দ কুমিল্লা নগরের বাদুড়তলা এলাকার বাসিন্দা। তিনি একই এলাকার সিডি প্যাথ অ্যান্ড হসপিটালে ৩০ বছর ধরে রোগী দেখতেন। এই চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি ও কুষ্ঠরোগ–বিশেষজ্ঞ সপ্তাহের প্রতি বুধবার সকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগী দেখতেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লায় ফেরার পথে লাকসামের বিজরা এলাকায় দু-তিনটি মোটরসাইকেলের আরোহীরা নাজমুল হাসানের প্রাইভেট কারকে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে তাঁরা গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে দিয়ে পালিয়ে যান। পরে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিয়ে সড়কের পাশেই থেমে যান তিনি। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে কুমিল্লা সিডি প্যাথ অ্যান্ড হসপিটালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আসার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিডি প্যাথ অ্যান্ড হসপিটালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুন্সী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মূল ঘটনাটা আসলে কী, সেটা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। কারণ, ডাক্তার নাজমুল একাই ছিলেন গাড়িতে। আমরাও স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশের কাছে এমন কথা শুনেছি।’ তিনি জানান, নাজমুল হাসান আখন্দের গ্রামের বাড়ি জেলার দাউদকান্দি উপজেলায়। তিনি দুই সন্তানের জনক।

বুধবার রাত পৌনে ১২টার দিকে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লাকসাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজনীন সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই চিকিৎসক গাড়ি চালানোর সময় কয়েকটি মোটরসাইকেলকে চাপ দিয়েছিলেন। তবে এতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ওই চিকিৎসকের অসুস্থতার কারণে বা অসাবধানতার কারণে এমনটা হতে পারে। তিনি বলেন, চাপ দেওয়ার কারণে মোটরসাইকেলচালকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই চিকিৎসককে ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে হেলমেট দিয়ে চিকিৎসকের গাড়ির লুকিং গ্লাস তাঁরা ভেঙে দেন। এ সময় চিকিৎসক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থামিয়ে ফেলেন।

ওসি নাজনীন সুলতানা বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে, এ ঘটনার কারণে আতঙ্কিত হয়ে হার্ট অ্যাটাকে ওই চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে হাইওয়ে পুলিশ ও আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।’