সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলছে পৌরসভা, ভোগান্তি

ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভায় সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। নগরকান্দা বাজারের কলেজ বালিয়া মহল্লায় গতকাল বিকেলেছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুরের নগরকান্দা পৌরসভার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সড়কের পাশে। ফলে আশপাশে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। ভোগান্তিতে রয়েছে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী এবং ওই এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, তাঁরা একাধিকবার পৌরসভার মেয়রের কাছে আবর্জনা ওই সড়কের পাশে না ফেলার জন্য অনুরোধ করেছেন। প্রতিবার আশ্বাস পাওয়া ছাড়া সমাধান মেলেনি।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখে ও এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নগরকান্দা বাজারের কলেজ বালিয়া মহল্লায় নগরকান্দা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের তালমা-জয়বাংলা আঞ্চলিক সড়কের পাশে বকুল মিয়া নামের এক ব্যক্তির মালিকানাধীন জায়গায় এ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। সাত শতাংশ জমিতে গত পাঁচ বছর ধরে ফেলা হচ্ছে এ বর্জ্য।

নগরকান্দা বাজারের কলেজ বালিয়ার ওই অংশে রড–সিমেন্টের দুটি, তিনটি ফলের গুদাম, তিনটি কাঠের আসবাবপত্র তৈরির দোকানসহ অন্তত ১৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ছাড়া আশপাশে অনেকগুলো পরিবারও বসবাস করছেন। এই সড়কটি নগরকান্দা উপজেলা সদরের সঙ্গে পাশের গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরসহ দক্ষিণের অন্য জেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক। এই সড়ক দিয়েই সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ে যেতে হয়। এতে ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পথচারীদের।

স্থানীয় লোকজন বলেন, প্রতিদিন সকালে পৌরসভার বর্জ্যবাহী তিনটি পিকআপে করে এসব বর্জ্য পাঁচ বছর ধরে ফেলা হচ্ছে। আগে এই বর্জ্য একই সড়কে ৩০০ মিটার দূরে সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের কাছে সড়কের পাশে একটি ফাঁকা জায়গায় ফেলা হতো। কয়েক বছর ধরে বর্তমান জায়গাতেই আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন সময় আগুন দিয়ে এই আবর্জনা পোড়ানো হয়। ফলে ওই সড়কের পাশের চারটি শিশুগাছ পুড়ে গেছে। দুর্গন্ধে পথচারীরা চলাচলের সময় মুখে কাপড় দিয়ে যান। পাশের নগরকান্দা বাসস্ট্যান্ডেও আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে।

সরকারি নগরকান্দা মহাবিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী সেতু আফরিন (১৮) বলেন, ‘এখান দিয়ে প্রতিদিন আমরা হেঁটে বা ভ্যানে করে কলেজে যাওয়া–আসা করি। এমনিতে এখানে দুর্গন্ধ থাকে। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে আগুন জ্বালিয়ে এসব আবর্জনা পোড়ানো হয়। তখন দুর্গন্ধের পাশাপাশি ধোঁয়ায় চারিদিক আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এতে আমাদের চলাচলে খুব সমস্যা হয়।’

নগরকান্দা মহল্লার বাসিন্দা সাইফ শরীফ (৪৪) বলেন, এখানে আবর্জনা ফেলার কারণে আশপাশের বাড়িঘরও দুর্গন্ধ হয়ে থাকে। পৌরসভা এই জায়গার বদলে যেখানে জনবসতি নেই, সেখানে এসব আবর্জনা ফেলতে পারে। এলাকার লোকজন এ বিষয়ে একাধিকবার মেয়রকে জানালেও শুধু আশ্বাস ছাড়া আর কিছু জোটেনি।

পৌর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে ৭ দশমিক ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নগরকান্দা উপজেলার নগরকান্দা ইউনিয়ন ও লস্করদিয়া ইউনিয়নের অংশবিশেষ নিয়ে নগরকান্দা পৌরসভা গঠন করা হয়। ওই সময় নগরকান্দা নামের ইউনিয়নটি কোদালিয়া-শহীদনগর ইউনিয়ন হিসেবে নামকরণ করা হয়। বর্তমানে প্রায় ৩১ হাজার মানুষের বসবাস করছে এ পৌরসভায়।

পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার বলেন, নগরকান্দা পৌরসভাটি ছোট। আর্থিক সংগতিও কম। তা–ই সমস্যাগুলো সমাধান করতে বেগ পেতে হচ্ছে। ওইখানে আবর্জনা ফেলায় দুর্ভোগের বিষয়টি তিনি জানেন। যত দ্রুত সম্ভব তাঁরা ওখান থেকে অন্যত্র আবর্জনা ফেলার উদ্যোগ নেবেন।

ওই এলাকার বাসিন্দা কাজী হেদায়েতুল উল্লাহ (৪৬) বলেন, এখানে যখন পৌরসভার লোকজন আবর্জনা ফেলা শুরু করে, তখন তাঁরা ভেবেছিলেন অল্প কিছুদিনের জন্য হয়তো ফেলবে। কিন্তু দেখতে দেখতে পাঁচ বছর কেটে গেল। এখনো আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। মনে হচ্ছে সড়কটি পৌরসভার স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন। তাঁরা অবস্থার অবসান চান।