উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ–গোলাগুলি, দুই শিশু গুলিবিদ্ধ

গোলাগুলি
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে পৃথক দুটি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই রোহিঙ্গা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) এ ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাদের দাবি, ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ শিশুরা হলো আশ্রয়শিবিরের এফ ব্লকের ৫৮ নম্বর শেডের বাসিন্দা ওবায়দুল হকের মেয়ে উম্মে হাফসা (১১) ও একই শেডের আবদুল খালেকের ছেলে আবুল ফয়েজ (৮)।

পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, আশ্রয়শিবিরে মাদক চোরাচালান ও অস্ত্র বেচাকেনা নিয়ে আরসার সঙ্গে আরএসওর সদস্যদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এর জেরে আজ বেলা পৌনে একটার দিকে আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) এ–ব্লকের ৫৮ নম্বর শেড এলাকায় আরসা ও আরএসও সন্ত্রাসীদের মধ্যে থেমে থেমে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সাধারণ রোহিঙ্গারা আতঙ্কিত হয়ে এদিক–সেদিক ছোটাছুটি শুরু করেন। একপর্যায়ে দুই রোহিঙ্গা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়। পরে স্থানীয় রোহিঙ্গারা আহত দুই শিশুকে উদ্ধার করে প্রথমে ক্যাম্প-৮ ডব্লিউয়ের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বেলা তিনটার দিকে দুই শিশুকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনার পর আশ্রয়শিবিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। আতঙ্কে সাধারণ রোহিঙ্গারা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, গুলিবিদ্ধ দুই রোহিঙ্গা শিশুকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। উন্মে হাফসার কোমরের ওপর এবং আবুল ফয়েজের ডান পায়ে গুলি লেগেছে।

আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (অ্যাডিশনাল ডিআইজি) ছৈয়দ হারুনুর রশিদ বলেন, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই রোহিঙ্গা শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে ক্যাম্পে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। আশ্রয়শিবিরের সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কুতুপালং আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১ পশ্চিম) ই-ব্লক থেকে মো. ইলিয়াছ (২৮) নামের এক রোহিঙ্গা যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইলিয়াছ ই-ব্লকের ৪ নম্বর শেডের বাসিন্দা মামুন রশিদের ছেলে। পুলিশ ধারণা করছে, শ্বাসরোধ করে ইলিয়াছকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে উখিয়ায় বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) বি-৫৭ ব্লক এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন নুর কায়াছ (২৬) নামের এক রোহিঙ্গা গৃহবধূ। একই সময় উখিয়ার ময়নারঘোনা (ক্যাম্প-১২) আশ্রয়শিবিরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে গুরুতর আহত হন ক্যাম্পের হেড মাঝি রোহিঙ্গা আবদুর রহিম (৩৮)। নিহত নুর কায়াছ বালুখালী আশ্রয়শিবিরের বি-৫৭ ব্লকের বাসিন্দা নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী। আর আবদুর রহিম ময়নারঘোনা আশ্রয়শিবিরের এইচ-১ ব্লকের করিম উল্লাহর ছেলে। তিনি ওই শিবিরের জি-১ ব্লকের প্রধান মাঝি।