হাজারো মানুষের চোখের জলে মেয়র আরফানুলের চিরবিদায়
চোখের জলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক ওরফে রিফাতকে চিরবিদায় জানালেন কুমিল্লাবাসী। আজ শুক্রবার বাদ জুমা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাঁকে নগরের টমছমব্রিজ কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। তাঁর জানাজা পড়ান একমাত্র ছেলে এহেতাশামুল হক রাইয়ান।
জানাজায় সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় দলীয় নেতা-কর্মী ও শুভানুধ্যায়ীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা ৬ মিনিটে মেয়র আরফানুলের লাশ সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতাল থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। এরপর বিমানবন্দরের ৮ নম্বর ফটকে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে তাঁর মরদেহ কুমিল্লা নগরের মুন্সেফবাড়ি এলাকায় আনা হয়। সেখানে মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন ও পরিবারের সদস্যরা। আজ সকালে মরদেহ আ ক ম বাহাউদ্দিনের ঘরের সামনে রাখা হয়। এরপর সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত মরদেহ কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে রাখা হয়। সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত মরদেহ নগরের রামঘাট মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে রাখা হয়। এরপর মরদেহ কুমিল্লা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে নেওয়া হয়। সেখানে বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আ ক ম বাহাউদ্দিন ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান।
জানাজা শুরুর আগে মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আরফানুল হক রিফাত একজন দেশপ্রেমী মানুষ ছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগের অকৃত্রিম কর্মী ছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন কুমিল্লাবাসীর মনে বেঁচে থাকবেন।’
কুমিল্লা-৬ (সদর-সিটি-সেনানিবাস) আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ভ্যানগার্ড কর্মীকে হারিয়েছি। আমি অনেক কর্মী তৈরি করেছি। রিফাত ছিল সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ কর্মী।’ জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘তিনি সাদা মনের মানুষ ছিলেন। সত্যিকারের পজিটিভ মানুষ ছিলেন।’
জানাজায় অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য মো. মুজিবুল হক, সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল, সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী মো. আবদুস সবুর, কুমিল্লা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মফিজুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার আবদুল মান্নান প্রমুখ।
গত বুধবার সন্ধ্যা ৬টা ১৮ মিনিটে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মেয়র আরফানুল সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান। ২০২২ সালের ১৫ জুন তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তৎকালীন মেয়র মনিরুল হক ওরফে সাক্কুকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি এই সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়র ছিলেন। তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন।
আরফানুল হক কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের টানা দুবারের সাধারণ সম্পাদক। দেশবরেণ্য সাংবাদিক ওবায়দুল হক আরফানুলের চাচা। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে তিনি আ ক ম বাহাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি কুমিল্লা ক্লাবের একাধিকবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কুমিল্লা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও তিনি।