সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কুমিল্লায় আ.লীগ নেতার বক্তব্য ভাইরাল

রোশন আলীছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলীর দেওয়া একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের ভোটে নৌকার প্রার্থী রাজী মোহাম্মদ ফখরুলকে ‘মেকানিজম’ করে হারানো হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

গতকাল শনিবার বিকেলে ওমরা হজে সৌদি আরবে যাওয়া উপলক্ষে নিজ বাড়িতে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন রোশন আলী। ওই অনুষ্ঠানে তিনি ওই বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সাবেক সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলও উপস্থিত ছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের জ্যেষ্ঠ এক নেতার এমন বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।

ওমরায় সৌদি যাওয়া উপলক্ষে নিজ বাড়িতে ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দিচ্ছেন রোশন আলী
ছবি: ভিডিও থেকে সংগৃহীত

বক্তব্যের একপর্যায়ে রোশন আলী বলেন, ‘ভোটে কিন্তু আমরা হারিনি, মেকানিজম করে হারানো হয়েছে। যেকোনো কারণে আমরা রেজাল্ট নিতে পারিনি। ৮২ হাজার ভোট কি কম? এগুলোর অনেক ইতিহাস, এগুলো আপনারা বুঝবেন না। আপনাদের ভাইঙ্গা বুঝাইতে অইব। যাদের আমি নেতা বানাইছি, তারা আমারে এখন ... দিয়াও গোনে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক মীরজাফর আছে। এগুলো যুগে যুগে ছিল, থাকবে। তারা যদি ভালো হয়ে যায়, আমরাও ভালো হয়ে যাব। আর হজ করার পর যদি দেখি ভালো না হয়েছে, তাহলে মাঠে নাইম্যা পড়ব।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। তাঁকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি রোশন আলী। পরে তিনি রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের পক্ষে নির্বাচন করেন। বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে রোশন ও রাজী এককাট্টা।

রোশন আলী আগেও বিভিন্ন সময় বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হয়েছেন। ২০২১ সালে দেবীদ্বার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপির নেতা মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে তাঁর একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। সেখানে ‘যারা নৌকা করে, তারা সব রাজাকারের বাচ্চা’ বলে তাঁকে মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছিল। ওই বক্তব্যের পর স্থানীয় নেতা-কর্মীরা তাঁর পদত্যাগের দাবিতে ঝাড়ুমিছিল করেছিলেন।

দেবীদ্বার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর বলেন, তাঁর (রোশন আলী) এসব কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষের কাছে আওয়ামী লীগ হাস্যরসে পরিণত হচ্ছে। তাঁকে কেউ থামাতে পারছেন না। আগেও বিভিন্ন সভায় নেতা-কর্মীদের গালিগালাজ করে বক্তব্য রেখে বিতর্কিত হয়েছেন, যা সবাই দেখেছেন ও শুনেছেন। তাঁর কর্মকাণ্ডে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগও বিব্রত। আসলে তিনি মাইক হাতে পেলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

জানতে চাইলে রোশন আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বক্তব্য রেখেছি। সেটা ভাইরাল হলো কি না, জানি না। আমি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বলেছি, গত নির্বাচনে নৌকা ৮২ হাজার ভোট পাইছে, এটা কম না।’