এখনো অনেক কাজ বাকি

এবার জেলার ১২টি উপজেলায় ৩৮টি হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করছে পাউবো।

সুনামগঞ্জে নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ। গতকাল বিকেলে জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের সুন্দরপুর এলাকায়।ছবি: প্রথম আলো

সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের সুন্দরপুর, ডাকাতখালী, উলুকান্দি ও যতীন্দ্রপুর এলাকার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজে এখনো মাটি ফেলা হচ্ছে। কাজ চলছে ঢিমেতালে। এ অবস্থায় হাওরের ১২ নম্বর প্রকল্পের একাংশ ধসে পড়ে পুরো বাঁধটি ঝুঁকি মধ্যে রয়েছে। অথচ এসব কাজ গতকাল বুধবারের (২৮ ফেব্রুয়ারি) মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

শুধু জামালগঞ্জ নয়, জেলার অন্য উপজেলাগুলোতেও এখনো পুরোপুরি ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ হয়নি। হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের সময়সীমা ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারাও নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, এ পর্যন্ত কাজ ৮৭ ভাগ হয়েছে। বাকি কাজ শেষ করতে আরও সাত দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে।

পাউবোর দাবির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনের নেতারা। তাঁরা বলেছেন, বাঁধের সার্বিক অবস্থা ভালো নয়। কাজের গতি কম। এখন পর্যন্ত ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ কাজ হয়েছে। এক সপ্তাহ বা ১৫ দিনে এই কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এবার সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ৩৮টি হাওরে ৫৯১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করছে পাউবো। এতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে ৭৩৫টি। প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা।

জামালগঞ্জ উপজেলার হালির হাওরের বৌলাই নদের তীরের প্রকল্পগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে ১২ থেকে ১৮ নম্বর—এই সাত প্রকল্পে এখনো মাটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। শ্রমিকেরা বাঁধে মাটি ফেলছেন। ১২ নম্বর প্রকল্পের নদীর তীরের মাটি ধসে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বাঁধের এই অবস্থা হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। কিন্তু এরপর আর কোনো কাজ হয়নি। এই প্রকল্পের সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টির কারণে এই সমস্যা হয়েছে। আবার কাজ শুরু করেছি। দ্রুতই কাজ শেষ হবে।

তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর, মাটিয়ান হাওর, গুরমার হাওরে এখনো বাঁধের কাজ অসম্পূর্ণ আছে। মাটিয়ান হাওরের বোয়ালমারা বাঁধের ৬০, ৬১ ও ৬২ নম্বর প্রকল্প, বর্ধিত গুরমার হাওরের ১৪ নম্বর প্রকল্প এবং শনির হাওরের ২৬, ৩৪, ৪৫ ও ৭৭ নম্বর প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এসব প্রকল্পে সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বৃষ্টি হওয়া, কার্যাদেশ দেরিতে পাওয়াসহ নানা অজুহাত সামনে আনছেন কাজ শেষ করতে না পারার পেছনে। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বলেন, কাজে তদারকির অভাব আছে। আবার পিআইসির লোকজন সময়মতো টাকা পাননি, এটাও একটা সমস্যা।

প্রথম আলোর জগন্নাথপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, উপজেলার বৃহৎ নলুয়ার হাওরের ৮ থেকে ১৪ নম্বর—এই পাঁচ প্রকল্পের অধিকাংশ স্থানে এখনো মাটি পড়েনি। এর মধ্যে ১১ নম্বর প্রকল্পের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল। মঙ্গলবার থেকে আবার শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের সভাপতি মফিজ আলী বলেন, এখন একসঙ্গে কয়েকটি মাটির কাটার যন্ত্র লাগিয়েছেন। এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ করবেন।

উপজেলার দায়িত্বে থাকার পাউবোর কর্মকর্তা সবুজ কুমার শীল জানান, উপজেলার ৩০টি প্রকল্পের মধ্যে নলুয়ার হাওরের পাঁচটি প্রকল্প ছাড়া বাকিগুলোর মাটির কাজ শেষ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল বশিরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির কারণে কিছু কাজ বাকি থাকায় এক সপ্তাহ সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

ধর্মপাশা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর উপজেলায় এখনো বাঁধের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ধর্মপাশা উপজেলার দায়িত্বে পাউবো কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, তাঁর উপজেলায় ৯৬টি প্রকল্প রয়েছে। এখানে বাঁধের কাজ ৯০ ভাগ শেষ। মধ্যনগর উপজেলার ঘোরাডোবা হাওরে বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই হাওরের কয়েকটি প্রকল্পে এখনো মাটি ফেলা হচ্ছে। ১ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি নান্টু লাল সরকার বলেন, বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন কাজ বন্ধ ছিল। একইভাবে কাজ চলমান আছে চন্দ্রসোনারথাল হাওরে। এই হাওরের ৫২ নম্বর প্রকল্পের সভাপতি শাহীন আলম বলে, হাওর থেকে পানি ধীরে নামায় কাজে বিলম্ব হয়েছে।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, মাঝখানে বৃষ্টি হওয়াতেই কোনো কোনো হাওরে কাজে সমস্যা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি কাজ শেষ করা সম্ভব।