নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙায় রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তিনজনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গঠন করা আসনটির নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মো. সেফাতুল্লাহ এই নোটিশ পাঠান। আগামী রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কার্যালয়ে সশরীর হাজির হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে নোটিশের বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে রাজশাহী-৬ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. রাহেনুল হক, বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন (লাভলু) ও বাঘা পৌরসভার চেয়ারম্যান মো. আক্কাছ আলীকে। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
১২ ডিসেম্বর রাহেনুল হক, লায়েব উদ্দীন ও আক্কাছ আলীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ এনে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন মাহামুদুল হক ওরফে সৈকত নামের শাহরিয়ার আলমের একজন কর্মী।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ১১ ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মাহামুদুল আড়ানী বাজার থেকে বাঘা সদরে আসছিলেন। এ সময় তিনি তেঁথুলিয়া বাজারে দুই শতাধিক কর্মী–সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে রাহেনুল হককে পথসভা ও জনসংযোগ করতে দেখেন। তখন রাস্তার উভয় পাশে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। ওই পথসভায় বাঘা উপজেলা পরিষদের উপজেলা চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দীন ও বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলীকেও দেখা যায়। লায়েব উদ্দীন সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে পথসভায় উপস্থিত হন। আর আক্কাছ আলী পৌরসভার সরকারি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। তাঁরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে তাদের নজরে এসেছে, রাহেনুল হক গত সোমবার বিকেলে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতীক বরাদ্দের আগেই বাঘার তেঁথুলিয়া বাজারে রাস্তা বন্ধ করে পথসভা করেছেন। এ সময় রাস্তার উভয় পাশে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ তৈরি করেন। এমন আচরণের মাধ্যমে রাহেনুল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮–এর বিধি ৬ (ঘ) এবং বিধি ১২ লঙ্ঘন করেছেন।
নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালার ৬–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, জনগণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে, এমন কোনো সড়কে প্রার্থী জনসভা কিংবা পথসভা করা যাবে না। প্রার্থীদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তিও অনুরূপ জনসভা বা পথসভা করতে পারবেন না। আর ১২ ধারায় বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি ভোট গ্রহণের জন্য নির্ধারিত তিন সপ্তাহ সময়ের আগে কোনো ধরনের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবেন না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। এর আগে ভোটের প্রচার চালানোর সুযোগ নেই।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে রাহেনুল হকের বিরুদ্ধে কেন নির্বাচন কমিশনে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে না, এ বিষয়ে আগামী রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে সশরীর হাজির হয়ে অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কারণ দর্শানো নোটিশে।
এ ছাড়া লায়েব উদ্দীন ও আক্কাছ আলীকে দেওয়া নোটিশেও একই দিন একই সময়ে সশরীর অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেককে আলাদা নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্বতন্ত্র প্রার্থী রাহেনুল হকের পথসভা ও জনসংযোগে তাঁরা সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেছেন।
তবে রাহেনুল হকের দাবি, তিনি ওই দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তেঁথুলিয়া বাজারে গিয়েছিলেন। সেদিন হাটের দিন ছিল। তাঁকে দেখে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসেন। তিনি একটি জায়গায় বসেছিলেন। সেখানে পথসভার মতো কিছু হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে লায়েব উদ্দীন বলেন, ‘আমি ওই দিন সরকারি গাড়ি ব্যবহার করিনি। সেদিন আমরা হাইয়েস গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। তবে আমি শোকজ নোটিশ পেয়েছি। মহামান্য আদালতের প্রতি আমার সম্মানবোধ আছে। আমি যথাসময়ে জবাব দাখিল করব।’ একই দাবি করেন আক্কাছ আলী।