পেঁয়াজের ‘ভান্ডারে’ও পাইকারিতে দাম বেড়েছে কেজিতে ৭৫ টাকা

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে আজ শনিবার পুরোনো পেঁয়াজ ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছেছবি: প্রথম আলো

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণার এক দিনের মাথায় বাংলাদেশের ‘পেঁয়াজের ভান্ডার’ নামে পরিচিত পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার করমজা চতুরহাটে পেঁয়াজের পাইকারি দাম কেজিপ্রতি প্রায় ৭৫ টাকা বেড়েছে। আগাম জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে ওঠায় যখন ধীরে ধীরে দাম কমতে শুরু করেছিল, তখন হঠাৎ এক ঘোষণায় প্রায় ৬০ শতাংশ দাম বেড়ে গেছে।

চতুরহাট বাজারের ব্যাপারী ও আড়তের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুদিন আগেও পেঁয়াজের বাজারে কোনো অস্থিরতা ছিল না; বরং আগাম জাতের নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করায় কমতে শুরু করেছিল নতুন ও পুরোনো পেঁয়াজের দাম। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই বাড়তে থাকে দাম। গত বুধবার এই হাটে নতুন পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা এবং পুরোনো পেঁয়াজ ১২৫ থেকে ১৩৮ টাকা কেজি দরে (পাইকারি) বিক্রি হয়েছিল। মাত্র দুদিনের মধ্যে দাম বেড়ে আজ নতুন পেঁয়াজ ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় এবং পুরোনো পেঁয়াজ ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কৃষকের ঘরে এখনো ৫ হাজার টন পুরোনো হালি পেঁয়াজের মজুত রয়েছে। অন্যদিকে হাটে আগাম ও মূলকাটা জাতের নতুন যে পেঁয়াজ উঠছে, তার বেশির ভাগই এখনো পুরোপুরি পুষ্ট হয়নি। সাধারণত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে এই জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসে। তবে কৃষকেরা এবার কিছুটা আগেভাগে আবাদ করেছিলেন। বাজার ভালো দেখে কৃষকেরা সেই পেঁয়াজ নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগেই জমি থেকে তুলে বাজারে নিয়ে আসছেন।

করমজা চতুরহাটে আজ শনিবার ছিল হাটবার। এই বাজার থেকে আজ ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ৩৫ মণ দেশি পুরোনো পেঁয়াজ কিনেছেন স্থানীয় ব্যাপারী রফিকুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আজ আরও বেশি কেনার ইচ্ছা ছিল তাঁর। কিন্তু ঢাকায় প্রশাসনের অভিযানের কথা শুনে তিনি পেঁয়াজ কেনা বন্ধ করে দেন। তিনি বলেন, ‘এই পেঁয়াজ যদি ঢাকায় নিয়্যা ১১০ বা ১২০ টাকায় বেচা লাগে, তাইলে তো বাড়িঘর বেচা লাগবি। এই জন্য পেঁয়াজ কিন্যা ঢাকায় পাঠানোর সাহস পাতেছি না।’

হাটের সবচেয়ে বড় পেঁয়াজের আড়ত মুন্নাফ ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক শিপন হোসেন জানান, চার-পাঁচ দিন হলো হাটে আগাম জাতের (মূলকাটা) নতুন পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। আজ এই পেঁয়াজ পাইকারি ১২০ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে পুরোনো দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৭৫ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে। ঢাকায় পুরোনো দেশি পেঁয়াজের চাহিদা বেশি। কিন্তু সেখানকার পাইকারি বাজারে প্রশাসনের অভিযানের কথা শুনে ব্যাপারীরা পেঁয়াজ কিনতে ভয় পাচ্ছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবারের পেঁয়াজ মৌসুমে সাঁথিয়ায় ১৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে আগাম ও বাকি সাড়ে ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজের আবাদ হবে। আগাম জাতের পেঁয়াজের প্রায় পুরোটাই ইতিমধ্যে আবাদ হয়েছে। অন্যদিকে হালি জাতের পেঁয়াজের মধ্যে মাত্র ১০ হেক্টর এখন পর্যন্ত আবাদ হয়েছে। চার-পাঁচ দিন হলো আগাম জাতের পেঁয়াজ বাজারে আসছে এবং দেড় মাসের মধ্যে এই জাতের সব পেঁয়াজ বাজারে চলে আসবে।

সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জীব কুমার গোস্বামী বলেন, ‘কৃষকের ঘরে এখনো পাঁচ হাজার টন হালি পেঁয়াজ মজুত আছে। সেই পেঁয়াজ এখনো বাজারে উঠছে। আর আগাম জাতের পেঁয়াজ ওঠাও শুরু হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এ ধরনের পেঁয়াজ বাজারে আরও বেশি করে উঠবে। এতে বাজারে স্বস্তি ফিরে আসবে বলে মনে করছি।’