২ শতাংশ জমি নিয়ে বিরোধে চাচাকে কুপিয়ে হত্যা, জবানবন্দিতে ভাতিজা

মাদারীপুরে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কবির হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত তাঁর ছোট ভাই সবুর হাওলাদারসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার দুপুরে কালকিনি থানায়
ছবি: প্রথম আলো

মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে কবির হাওলাদারকে (৫৫) হত্যার ঘটনায় তাঁর দুই ভাতিজা আসলিম হাওলাদার (২২) ও আসলাম হাওলাদার (১৯) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ চৌধুরী এ দুজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কালকিনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মিঠু ফকির জবানবন্দির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুজন (দুই ভাতিজা) আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মূলত জমিজমা নিয়ে পূর্ববিরোধ থেকে সবুর হাওলাদারের ছোট ছেলে আসলাম হাওলাদার ছুরি দিয়ে তাঁর চাচা কবির হাওলাদারকে প্রথমে আঘাত করেন। পরে তাঁকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। পরে আসলামের বড় ভাই আসলিম ঘটনা দেখে দৌড়ে যান এবং তিনিও তাঁর চাচাকে হত্যার সঙ্গে যুক্ত হন।

মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ জনারদন্দি এলাকার মৃত আলতাজুদ্দিন হাওলাদারের দুই ছেলে কবির ও সবুরের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। দুই ভাইয়ের মধ্যে এর আগে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সালিসও হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে কবির তাঁর দাবি করা ধানের জমিতে গেলে বাধা দেন সবুর। প্রথমে দুই ভাইয়ের মধ্যে হাতাহাতি ও বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে ওই জমিতে কবিরকে একা পেয়ে ধারালো ছুরি দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন সবুরের দুই ছেলে আসলিম ও আসলাম। এ সময় সবুরের স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন।

পরে স্থানীয় লোকজন কবিরকে উদ্ধার করে কালকিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার দিন রাতেই নিহত কবিরের ছেলে ফরিদ হাওলাদার (২৫) বাদী হয়ে তাঁর চাচা সবুর হাওলাদারসহ চারজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর অভিযুক্ত সবুর হাওলাদার (৪৯), সবুর হাওলাদারের স্ত্রী লিপি বেগম (৪১), তাঁর ছেলে আসলিম হাওলাদার ও আসলাম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে কালকিনি থানার পুলিশ।

এদিকে চার আসামিকে আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কালকিনি থানার এসআই মো. মিঠু ফকির তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত আজ সোমবার রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মাত্র দুই শতাংশ জমি নিয়ে কবির ও তাঁর ভাই সবুরের মধ্যে বিরোধ ছিল। নিহত কবির তাঁর ভাতিজা আসলামকে থাপ্পড় দেন। এ ঘটনার পরই আসলাম ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁর চাচাকে প্রথমে ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও কালকিনি সার্কেল) মো. আলাউল হাসান বলেন, প্রাথমিক তদন্তে গ্রেপ্তার চারজনই কবির হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তিরাও বলেছেন, ওই চারজন কবিরকে কোপানোর সময় একসঙ্গে ছিলেন। আসামিদের মধ্যে আসলাম ও তাঁর ভাই হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত আছেন কি না, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে এ ঘটনার সঠিক রহস্য উদ্‌ঘাটন করবে।