ছোট ছেলেটাকে দেখে যেতে পারলেন না রাজবাড়ীর নিহত সুরুজ

লিবিয়ায় বন্যায় মারা যাওয়া সুরুজ মন্ডল ওরফে শাহীনের পরিবার
ছবি: প্রথম আলো

লিবিয়ার দারনায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে দুজন রাজবাড়ীর পাংশার। তাঁদের একজন উপজেলার হাবাসপুর গ্রামের সুরুজ মন্ডল ওরফে শাহীন। লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় মুঠোফোনের মাধ্যমে বিয়ে করেছিলেন তিনি। এরপর দেশে এসে কিছুদিন সংসার করেন। তখন বড় ছেলে রাব্বী মন্ডলের জন্ম, বয়স এখন প্রায় দুই বছর। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ১০ মাস আগে আবার লিবিয়ায় যান তিনি। ছোট ছেলের জন্ম হয় ছয় মাস আগে। সেই ছেলেকে দেখার আগেই প্রবাসে বন্যায় মৃত্যু হলো সুরুজের।

বৃহস্পতিবার সুরুজের গ্রামের বাড়িতে গেলে এসব তথ্য জানা যায়। সুরুজের বাবা আরশেদ আলী মন্ডল বৃদ্ধ। একসময় কৃষিকাজ করলেও এখন বয়সের কারণে আর কাজ করতে পারেন না। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সুরুজ সবার ছোট।

পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে সুরুজ ভাগ্য ফেরাতে লিবিয়া যান। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে সাকিলা খাতুনকে বিয়ে করেন। প্রায় তিন বছর আগে তিনি দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু টাকাপয়সা নিয়ে আসতে পারেননি। দেশে আসার পর একটি পুরোনো ইজিবাইক কিনে ছিলেন। ইজিবাইক চালানোর পাশাপাশি শ্রমিকের কাজ করতেন। ১০ মাস আগে ধারদেনা করে তিনি আবারও লিবিয়ায় যান।

সাকিলা খাতুন বলেন, ‘রোববার বিকেলে সর্বশেষ আমার সঙ্গে তার (সুরুজ) ভিডিও কলে কথা হয়। ও বলে ছিল সেখানকার অবস্থা ভালো না। বড় ঝড় হবে। কী হবে বুঝতে পারছে না। সে মারা গেলে আমি যেন সন্তানদের দেখে রাখি। এরপর বাড়ির অন্যদের সঙ্গে কথা বলে। আমি এরপরে অনেকবার তাকে কল করেছি। পাই নাই। পরে জানতে পারি সে মারা গেছে।’

সুরুজের বাবা আরশেদ আলী মন্ডল বলেন, ‘ইজিবাইক বিক্রি করে, বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করে ছেলে লিবিয়া যায়। কিন্তু ভালো কাজ পায় নাই। এখানে–সেখানে কাজ করত। কোথাও দুই ঘণ্টা, কোথাও এক ঘণ্টা কাজ করত। ১ সেপ্টেম্বর সে ১৫ হাজার টাকা পাঠিয়েছিল। এখনো ধারের টাকা পরিশোধ করতে পারি নাই।’

সুরুজের প্রতিবেশী হাবাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (ইউপি) সদস্য ওমর আলী বলেন, পরিবারটির সবকিছু শেষ হয়ে গেল। সুরুজের দুটি ছোট বাচ্চা আছে। একটি বাচ্চাকে তো সে কোলেই নিতে পারল না!

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, স্থানীয়ভাবে তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে এখনো বিস্তারিত কিছু জানেন না।