তেঁতুলিয়ার পাথরমহালে আর ‘বোমা মেশিন’ দেখতে চান না শ্রমিকেরা
মোটা দড়িতে আড়াআড়ি ছোট ছোট তিনটি বাঁশের লাঠি বাঁধা। সেগুলোর দুই প্রান্ত ধরে নুইয়ে পড়ে টানছেন ১০ জন। দড়ির অন্য মাথা ডাহুক নদের মধ্যে ডুবে আছে। ১০ জনের সম্মিলিত বলে ধীরে ধীরে জেগে উঠল সেই মাথায় লম্বা করে বাঁধা একটি বাঁশ। দ্রুত তার নিচে লোহার জালের একটি ডোঙা পেতে দিলেন কয়েকজন।
অন্যদিকে বাঁশটিতে বাঁধা একটি লোহার জাখলা বা বড় বেলচাভর্তি বালুর স্তূপ ঠেলে তুলে পানির নিচ থেকে উঠে এলেন আরও একজন, ঢেলে দিলেন ডোঙায়। অন্যরা ডোঙাটি সরিয়ে নিলে আরেকজনের সাহায্যে জাখলা ধরে তিনি আবার ডুব দিলেন পানিতে। ডোঙায় ঢালা বালুতে মিশে আছে ছোট-বড় পাথর।
মোট ১৯ জন শ্রমিকের একেকবারের শ্রমের ফসল। পাথর আহরণের এটা সনাতন পদ্ধতি। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের বালাবাড়ি এলাকায় ডাহুক নদে গত ১৩ সেপ্টেম্বর এভাবেই পাথর তুলছিলেন এক দল শ্রমিক। তাঁরা জানালেন, আগস্টের শেষ সপ্তাহে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে বন্দিভিটা এলাকায় পাথর তুলতে বোমা মেশিন বসিয়েছিল কিছু লোক। উপজেলা প্রশাসন সেটা জব্দ করে মামলা করেছে। তার পর থেকে এলাকায় বোমা মেশিন নেই।
বোমা মেশিনকে ‘ড্রেজার’ বলেন শ্রমিকেরা। পাথর তোলার ক্ষেত্রে বোমা মেশিন বা কোনো যন্ত্রের ব্যবহারই বৈধ নয়। আগেও প্রশাসন বোমা মেশিন উৎখাত করেছিল। প্রায় চার বছর পাথর তোলা এক রকম বন্ধ ছিল। শ্রমিকেরা জীবিকা হারিয়েছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর আবার পাথর তোলা শুরু হয়েছে। তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন নদ-নদীর পাথরমহাল ও ব্যক্তিমালিকানার জমি থেকে পাথর তুলে জীবিকা চালান হাজারো শ্রমিক। সদর উপজেলাতেও পাথরমহাল আছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে শ্রমিক, পাথরক্রেতা ক্ষুদ্র ও বড় ব্যবসায়ী, পাথর ভাঙার মেশিনের মালিক ও পাথরমহালের ইজারাদারদের সঙ্গে কথা বলেছেন এ প্রতিবেদক।
শ্রমিকেরা কেউই বোমা মেশিনের ব্যবহার চান না। কারণ, এগুলো অনেক শ্রমিকের কাজ খেয়ে ফেলে। এতে পাথরও খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। মো. মিন্টু ও আইবুল হক নামের দুজন শ্রমিক বলেন, এখন আর আগের মতো পাথর পাওয়া যায় না।
দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা অনুসন্ধানে পুলিশ, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও কথা হয়। মামলার কাগজ ও অন্যান্য নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, বোমা মেশিনের সঙ্গে যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের চক্রে রাজনীতির প্রভাবের কথা উঠে এসেছে। পরিবেশবিদেরা বলেছেন, বোমা মেশিনের কারণে ক্ষতির কথা। সবারই ভয়, বোমা মেশিন আবার ফিরবে না তো?
পাথরের ব্যবসায় লাভের গুড়
সদর ও তেঁতুলিয়া উপজেলার বিভিন্ন নদ-নদী থেকে পাথর তোলা হয়। জেলায় সরকারের ইজারা দেওয়া পাথরমহাল আছে ১৯টি, সবই নদ-নদীতে। তবে সরেজমিনে তেঁতুলিয়ায় জমি খুঁড়েও অবৈধভাবে পাথর তুলতে দেখা যায়। শ্রমিকেরা দলবদ্ধভাবে জাখলা, ডোঙা আর জালসহ সরঞ্জাম কেনেন। তারপর এলাকা বেছে নিয়ে পাথর তোলেন। বালু থেকে পাথর ছেঁকে তাঁরা ট্রাক্টর হিসেবে বিক্রি করেন মহাজন নামে পরিচিত এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে। মহাজনেরা সেটা বেচেন পাথর ভাঙার মেশিন মালিক বা দ্বিতীয় ধাপের ব্যবসায়ীদের কাছে। মেশিনে ভাঙা পাথর কিনে নিয়ে যান দেশের নানা জায়গা থেকে আসা তৃতীয় ধাপের বড় ব্যবসায়ীরা।
তেঁতুলিয়ার বালাবাড়ি এলাকায় শ্রমিকেরা ট্রাক্টরপ্রতি ১০০ ঘনফুটের মতো পাথর বিক্রি করছিলেন আট হাজার টাকায়। তা থেকে তাঁরা নদে ডোবা জমির মালিককে দেন এক হাজার টাকা। সারা দিনের বিক্রি শেষে যা থাকে, তাতে একেকজনের ভাগে জোটে সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।
পাথরমহালের ইজারাদারেরা মাশুল তোলেন তৃতীয় ধাপের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ১০ চাকার ট্রাকপ্রতি ৫০০ টাকা এবং ৬ চাকার ট্রাকপ্রতি ৩০০ টাকা করে। ইজারাদারদের ছয়টি সংগঠনের মোর্চা ‘জেলা পাথর বালি যৌথ ফেডারেশন’ এই টাকা আদায় নিয়ন্ত্রণ করে।
শক্তিশালী শ্যালোপাম্পে বাড়তি যন্ত্রাংশ আর প্লাস্টিকের পাইপজুড়ে তৈরি করা হয় বোমা মেশিন। এসব পাইপ পানির গভীরে নামিয়ে চালু করা হলে তলদেশ থেকে অল্প সময়ে অনেক পাথর উঠে আসে।
ইজারাদারদের একটি সংগঠন ‘পাথর বালি শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’র দপ্তর সম্পাদক ও ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তবিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ট্রাকে পাথর লোড করলেই আমরা ইজারার টাকা আদায় করি। সেই পাথর ইজারা এলাকা থেকে তুললেও দিতে হবে, বাইরে থেকে তুললেও দিতে হবে।’
বোমা মেশিনের ইতিবৃত্ত
শক্তিশালী শ্যালোপাম্পে বাড়তি যন্ত্রাংশ আর প্লাস্টিকের পাইপজুড়ে তৈরি করা হয় বোমা মেশিন। এসব পাইপ পানির গভীরে নামিয়ে চালু করা হলে তলদেশ থেকে অল্প সময়ে অনেক পাথর উঠে আসে। স্থানীয় লোকজন বলেছেন, একটি মেশিন দিয়ে দিনে ২০ ট্রাক্টরের বেশি পাথর তোলা যায়। একটি বোমা মেশিনে শ্রমিক লাগে সর্বোচ্চ ১০ জন। তাঁরা মেশিন মালিকের কাছ থেকে ভালো মজুরি পান।
জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১০ সালের পর বোমা মেশিনের আগ্রাসনের প্রতিবাদে জেলা সদরে একাধিকবার মানববন্ধন হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে দুই বছর মেয়াদে পাথরমহালগুলো ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। বোমা মেশিন দিয়ে পাথর তোলা চালিয়ে যান কিছু ব্যবসায়ী। মানুষজন বলছেন, এঁদের পেছনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কিছু স্থানীয় নেতার তৎপরতা ও পুলিশ প্রশাসনের কারও কারও মদদ ছিল।
স্থানীয় লোকজন বলেছেন, একটি মেশিন দিয়ে দিনে ২০ ট্রাক্টরের বেশি পাথর তোলা যায়। একটি বোমা মেশিনে শ্রমিক লাগে সর্বোচ্চ ১০ জন। তাঁরা মেশিন মালিকের কাছ থেকে ভালো মজুরি পান।
জেলার কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন বোমা মেশিনের প্রতিবাদে একাধিকবার অন্দোলন করে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বোমা মেশিন বন্ধে অভিযান চালায়; কিন্তু বারবার ব্যর্থ হয়। এদিকে পাথর তোলার দাবিতে শ্রমিকদের একাংশকে যুক্ত করে পাল্টা আন্দোলনও শুরু হয়। অভিযোগ আছে, এর নেপথ্যে ছিলেন বোমা মেশিন চালানো ব্যবসায়ীরা।
তেঁতুলিয়ার ভজনপুর এলাকায় ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে একজন নিহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ দুটি মামলা করে। এর পর থেকে এলাকায় পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়। জীবিকা হারান শ্রমিকেরা। একই বছরের ১৮ জুন চিঠি দিয়ে সারা দেশে পাথরমহাল ইজারা ও পাথর তোলা বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সেই চিঠিতে বলা হয়, পরিবেশ রক্ষা ও সরকারি স্বার্থে ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং গেজেটভুক্ত পাথরমহালগুলোর (কোয়ারি) ইজারার মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং ইজারা দেওয়া বন্ধ আছে। জেলা প্রশাসকদের মহালগুলো বুঝে নিতে বলা হয়।
অন্তর্বর্তীকালে বোমা মেশিন
২০২৪ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তেঁতুলিয়া উপজেলায় বোমা মেশিন বসিয়ে পাথর তোলা শুরু করেন কিছু ব্যবসায়ী। কখনো সমতল জমি কেটে আবার কখনো নদীর মধ্যে রাতের আঁধারে বোমা মেশিন চলছিল। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সারা দেশের পাথরমহালগুলো ইজারার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের নোটিশ দেয়। এরপর তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় সমতল ভূমি কেটে পাথর তোলা বাড়ে। সনাতন পদ্ধতিতে কোদাল দিয়ে মাটি কেটে পাথর তোলার পাশাপাশি বোমা মেশিনও পুরোদমে চলতে থাকে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) পঞ্চগড় শাখার কর্মীরা জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এরপর অভিযানের উদ্যোগ নেয় জেলা প্রশাসন। গত ১৩ মার্চ তেঁতুলিয়ার ভজনপুর ইউনিয়নের সংগঠন ও কীর্তনপাড়া গ্রামে অবৈধ পাথর তোলা বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে হামলার ঘটনা ঘটে। তখন পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। পুলিশ ও বিজিবিকে নিয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান চালানোর পর আপাতত বোমা মেশিনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে।
গত সরকারের আমলে কিছুসংখ্যক অসাধু রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ের কারণে তখন এই মেশিন ঠেকাতে প্রশাসনের কিছুটা সময় লেগেছিল।আজহারুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, বাপা, পঞ্চগড়
গত ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শতাধিক বোমা মেশিন জব্দ করে থানায় আনে পুলিশ; প্রশাসন কিছু মেশিন ও সরঞ্জাম ধ্বংস করেছে। পুলিশ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে অন্তত ২০টি মামলা করেছে। গত ৫ মার্চ পঞ্চগড়ের ১৯টি পাথরমহালের ইজারার বিজ্ঞপ্তি দেয় জেলা প্রশাসন। এতে শুধু সনাতন পদ্ধতিতে পাথর তোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বাপার পঞ্চগড় জেলার সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গত সরকারের আমলে কিছুসংখ্যক অসাধু রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ের কারণে তখন এই মেশিন ঠেকাতে প্রশাসনের কিছুটা সময় লেগেছিল। তিনি বলেন, ‘এবার প্রশাসনের আন্তরিকতায় ফলাফল দ্রুত পেয়েছি।’ তবে তাঁর ভয়, অন্তর্বর্তী সরকার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা না নিলে আবার বোমা মেশিন ফিরে আসবে।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, বোমা মেশিন স্থায়ীভাবে বন্ধের লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে ২৫ সদস্যের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে কমিটিতে পুলিশ ও গ্রাম পুলিশের সদস্যরাও আছেন। তাঁদের দায়িত্ব, বোমা মেশিনের হদিস পেলেই প্রশাসন ও থানার সহায়তা নিয়ে বন্ধ করা। তাঁরা মামলাও করবেন।
ইতিমধ্যেই শত শত একর সমতল জমি ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তেঁতুলিয়ায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও বিশাল মাটির ঢিবি আবার কোথাও গভীর গর্ত। গনাগছ, কীর্তনপাড়া, সংগঠন, খুনিয়াগছ, হারাদিঘী, বড়বিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় বহু বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত জমি এখনো অনাবাদি পড়ে আছে।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান গোলাম কিবরিয়া বলেন, বোমা মেশিনের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন ও প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত না থাকলে ভবিষ্যতে এটা ফিরে আসতে পারে। এগুলো দিয়ে পাথর তোলা চলতে থাকলে মাটির স্তর নষ্ট হয়ে যাবে। হিমালয়ের পাদদেশে পঞ্চগড়ের অবস্থান হওয়ায় এতে ভূমিধসের ঘটনাসহ ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
কুয়াশা আর রাজনীতি
প্রশাসনের কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, অভিযান বন্ধ রাখলে শীতের ঘন কুয়াশার আড়ালে ফিরে আসতে পারে বোমা মেশিন। এখনো রাতের আঁধারে বোমা মেশিন বসানোর চেষ্টা চলছে। অভিযানে ছেদ পড়লে ও পরবর্তী রাজনৈতিক সরকার এলে বোমা মেশিন আবার ফিরে আসতে পারে।
২০২০ সালের আগে তেঁতুলিয়া উপজেলায় বোমা মেশিনের হোতারা বেশির ভাগই ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের অনুসারী। এখন তাঁদের কেউ পলাতক, কেউ কেউ এলাকায় থাকলেও নিষ্ক্রিয়। তবে সাম্প্রতিক অন্তত পাঁচটি মামলার নথি বলছে, আসামিদের কেউ স্থানীয় সরকারের সদস্য, কেউ বিএনপির নেতা-কর্মী, কেউ আবার আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। বেশ কিছু সাধারণ শ্রমিকও আছেন।
শ্রমিকদের স্বস্তি ও দাবি
তেঁতুলিয়ার দেবনগর, ভজনপুর, বুড়াবুড়ি, শালবাহান ও তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ও করতোয়া, সাঁও, ডাহুক ও মহানন্দা নদীর তীর ঘুরে পাথর উত্তোলন করতে দেখা যায়। বেশির ভাগ শ্রমিক বলছেন, বোমা মেশিন বন্ধ হওয়ায় তাঁরা খুশি। তবে তাঁরা সানতন পদ্ধতিতে দড়ি টানার সময় ছোট পাওয়ার টিলার ব্যবহার করতেন। একপর্যায়ে সেটাও বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এখন অবশ্য কিছু কিছু এলাকায় দড়ি টানতে আবার সেটা ব্যবহার করা যাচ্ছে।
শ্রমিকেরা বলছেন, বোমা মেশিন চলত গভীর রাতে, প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে। কারা এগুলো চালাচ্ছেন, তা বোঝা কঠিন ছিল। প্রশাসনের অভিযানে এসব বন্ধ করতে গিয়ে অনেক সময় সাধারণ শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছেন।
‘আমরা একদিনে খেতে চাই না। একদিনে যদি সব পাথর তুলে নেই, তখন আমরা শ্রমিকেরা কী করে খাব?’সমিরুল ইসলাম, পাথরশ্রমিক
শালবাহান ইউনিয়নের লোহাকাচি এলাকার শামীম হোসেন বলেন, ‘আমরা সাধারণ শ্রমিকেরা কেউ চাই না যে “ড্রেজার” চলুক।’ দেলোয়ার হোসেন নামের এক শ্রমিক বলেন, বোমা মেশিন না থাকায় তাঁরা কাজকর্ম করে একমুঠো ডাল-ভাত খেতে পারছেন। বোমা মেশিন চললে তাঁদের পেটে লাথি মারা হবে। বেশির ভাগ শ্রমিক কাজ হারাবেন।
ডাহুক নদের তীরে দাঁড়িয়ে পাথরশ্রমিক সমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা একদিনে খেতে চাই না। একদিনে যদি সব পাথর তুলে নেই, তখন আমরা শ্রমিকেরা কী করে খাব?’