তানোরে তল্লাশির নামে যুবককে মারধর ও মুক্তিপণ দাবির অভিযোগ

রাজশাহী জেলার মানচিত্র

হেরোইন তল্লাশির নামে রাজশাহীর তানোর থানার সামনে থেকে এক যুবককে ধরে প্রেসক্লাবে নিয়ে যান কয়েকজন সাংবাদিক ও স্থানীয় ব্যক্তি। পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাঁর কাছে দাবি করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। দিতে রাজি না হলে ওই যুবককে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ওই যুবককে উদ্ধার করেছে।

গতকাল সোমবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটেছে। উদ্ধারের পর মধ্যরাতে পুলিশ সজল আলী (৩০) নামের ওই যুবককে স্বজনদের জিম্মায় দিয়েছে। ভুক্তভোগী সজল আলী পেশায় মোটরসাইকেল মেকানিক। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শিবনগর গ্রামে। তবে এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। থানা-পুলিশ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেনের দাবি, ওই যুবক মামলা করতে চাননি। আর জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম বলেছেন, ভুক্তভোগী নিজেই যদি মীমাংসা করে নেন, আর মামলা করতে না চান, তাহলে তো পুলিশের কিছু করার নেই। এ ঘটনায় মামলা করা হলে পুলিশ আইনি পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি জানান।

অভিযুক্তদের মধ্যে অন্তত আটজন সাংবাদিকের নাম জানা গেছে। তাঁরা বিভিন্ন গণমাধ্যমের তানোর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাঁদের সঙ্গে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তানোর জোনের একজন মেকানিক, উপজেলা সদরের একজন মুদিদোকানি এবং একজন ইউপি সদস্যের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তাঁদের কাউকে গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে শিবগঞ্জ থেকে আসা সজল আলী মোটরসাইকেল নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমনূরা দিয়ে মুণ্ডুমালা-তানোর সড়কে ঢোকেন। তাঁর গন্তব্য ছিল নাটোরের নলডাঙ্গায় বোনের বাড়ি। মুণ্ডুমালা আসার পরে বিএমডিএর ওই কর্মচারীর সঙ্গে তাঁর পেট্রলপাম্পে তেল নিতে গিয়ে দেখা হয়। সজল তাঁর কাছে নলডাঙ্গা যাওয়ার সহজ রাস্তা কোনটি তা জানতে চান। ওই কর্মচারী তখন তাঁকে তাঁর পেছন পেছন আসতে বলেন। তাঁর কথামতো সজল আসতে থাকেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তানোর থানার সামনে পৌঁছালে ওই মেকানিক সজলকে থামান। এরপর তিনি ও চার সাংবাদিক তাঁকে আটকান। তাঁদের অভিযোগ, সজলের কাছে মাদকদ্রব্য আছে। তাঁরা পুলিশের লোক। তাঁকে তল্লাশি করতে হবে। এরপর তানোর থানার সামনে থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কাছে তাঁকে একটি প্রেসক্লাবে নেওয়া হয়।

সেখানে ব্যাগ তল্লাশি করে সজলের কাছে একটি কাঁঠাল, কিছু আম ও যবের ছাতু পাওয়া যায়। এই ছাতুকেই হেরোইন বলে ধরে নিয়ে তাঁকে থানায় নেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এরপর থানায় না নিয়ে তাঁকে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে মালার মোড় এলাকায় একটি স্কুলে নেওয়া হয়। সেখানে তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এ পর্যায়ে যোগ দেন আরও চারজন সাংবাদিক। সজল তাঁদের টাকা দিতে না চাইলে শুরু হয় মারধর। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁর চিৎকার শুনে এগিয়ে যান।

তাঁরা পরিচয় জানতে চাইলে অভিযুক্তরা নিজেদের সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। স্থানীয়রা তাঁদের জানান, সাংবাদিকদের এভাবে তল্লাশি ও মারধর করার সুযোগ নেই। পরে তাঁরা সবাইকে ঘেরাও করে রেখে থানায় খবর দেন। সন্ধ্যার দিকে পুলিশ গিয়ে ওই যুবককে উদ্ধার করে। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজন সাংবাদিকদের ধাওয়া দিলে তাঁরা পালিয়ে যান।

পরিচয় পাওয়া একজন সাংবাদিকের কাছে মুঠোফোনে ঘটনার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে পড়ে গেছি ভাই, আমি কিছু বলতে পারব না।’ আরেকজন বলেন, ‘ভাই, আমি শ্বশুরবাড়ি ছিলাম, ওই দিক দিয়ে যাওয়ার পথে চলে এসেছি।’ অথচ এই দুজন সাংবাদিকের ব্যাপারে সুস্পষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেছেন ভুক্তভোগী।

এ বিষয়ে মামলা করবেন কি না, জানতে চাইলে ভুক্তভোগী সজল আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁদের দাবি করা টাকা দিইনি এবং আমার জিনিসপত্রসহ ব্যাগও ফিরে পেয়েছি। তাই আর মামলা করতে চাই না।’