ফরিদপুরে মহড়া করে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন শাহদাব আকবর চৌধুরী

ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহদাব আকবর চৌধুরীর মহড়া। আজ রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর-২ আসনের উপনির্বাচনে মহড়া করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাহদাব আকবর চৌধুরী। তিনি জাতীয় সংসদের প্রয়াত উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে। আজ রোববার বেলা দেড়টার দিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি।

এদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় মহড়া করার মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হ‌ুমায়ূন কবির। আগামী ৫ নভেম্বর ইভিএমে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে।

এর আগে বিশাল একটি গাড়ির বহর নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আসেন শাহদাব। ওই বহরে দেড় শতাধিক মোটরসাইকেল, প্রায় অর্ধশত পিকআপ, অর্ধশতাধিক মাইক্রোবাস ছিল। এর পাশাপাশি ৪টি ঘোড়ার গাড়ি ও ২৫টির মতো ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) ছিল।

সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থী কোনোরকম মিছিল কিংবা মহড়া করতে পারবেন না।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আজ দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসেন শাহদাব। তিনি কালো রঙের একটি মাইক্রোবাসে চড়ে আসেন। সেখানে একটি বহর তাঁকে স্বাগত জানায়। পরে গোয়ালন্দের মোড় থেকে মাইক্রোবাসের একটি বহর এবং আরও পরে শহরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড় এলাকা থেকে পিকআপের একটি বহর তাঁর বহরের সঙ্গে যুক্ত হয়। এ বহরে নগরকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামন সরদার, সালথা উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রূপা বেগম ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস সরকারি গাড়ি নিয়ে যোগ দেন।

বিশাল একটি গাড়ির বহর নিয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আসেন শাহদাব। বেলা দেড়টার দিকে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। ফরিদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে ফরিদপুর মিউজিয়াম চত্বরে বক্তব্য দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস ও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহদাব আকবর।

বক্তারা বলেন, শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী শাহদাব। শাহদাব সাজেদা চৌধুরীর সন্তান। তাঁকে বিজয়ী করে আনা হবেই। বিএনপি-জামায়াতের কাছে মাথা নত করা হবে না।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন শামীম হক, মেয়র অমিতাভ বোস, ফরিদপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সালথা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন প্রমুখ। এ ছাড়া শাহদাবের স্ত্রী শাহনাজ খান ও ছেলে শাভাব আকবর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

সংসদীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রার্থী কোনোরকম মিছিল কিংবা মহড়া করতে পারবেন না। এ ছাড়া সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁর নিজের বা অন্যের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি যানবাহন, সরকারি প্রচারযন্ত্রের ব্যবহার বা অন্যবিধ সরকারি সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এ অনুযায়ী গাড়ির বহর নিয়ে মহড়া করে নির্বাচনী মনোনয়ন জমা দেওয়ায় নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহদাব। বিষয়টি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে।

অপরদিকে ওই বহরে সরকারি গাড়ি নিয়ে যোগ দিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন নগরকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদার, সালথা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রূপা বেগম ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস।

এ ব্যাপারে নগরকান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সরদার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সরকারি লোক, এ জন্য সরকারি গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন। এতে আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয় বলে তাঁর জানা নেই।

সাজেদা চৌধুরীর সাবেক এপিএস মো. শফিউদ্দিন বলেন, বহর নিয়ে নির্বাচনী কার্যালয়ের সামনে গেলেও বাড়তি কোনো মানুষ নির্বাচন কর্মকর্তার সামনে যাননি। ফলে এতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়নি।