সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়াদিয়ায় বড়শিতে ধরা পড়ছে বড় বড় বোল মাছ

১২ কেজি ওজনের বোল মাছ হাতে জেলে রফিক আলম।বৃহস্পতিবার সকালে সেন্ট মার্টিনের পূর্ব পাড়ায়
ছবি: প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। সেখান থেকে আরও সাত-আট কিলোমিটার দূরে গেলে পৌঁছানো যায় বিচ্ছিন্ন আরেক দ্বীপ ছেঁড়াদিয়ায়। ভ্রমণনিষিদ্ধ এই ছেঁড়াদিয়ার চারদিকে বড় বড় পাথরের স্তূপ। রাতে ডুবে থাকা পাথরের স্তূপে বড়শি ফেলে ধরা হচ্ছে বড় বড় বোল মাছ। সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে আসা পর্যটকের কাছে বোল মাছের চাহিদা বেশ। বর্তমানে সেন্ট মার্টিনে প্রতি কেজি বোল মাছ বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। স্থানীয় হোটেল–রেস্তোরাঁগুলোয় ১ কেজি ওজনের বোল মাছ গ্রিল করে খেতে গেলে গুনতে হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।

গতকাল বুধবার রাত ১১টার দিকে ছেঁড়াদিয়ায় বোল মাছ ধরতে যান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জেলে রফিক আলম। রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর বড়শিতে ধরা পড়ে ১২ কেজি ওজনের একটি বোল মাছ। বৃহস্পতিবার সকালে বোল মাছটি বিক্রির জন্য সেন্ট মার্টিন বাজারে নিয়ে যচ্ছিলেন তিনি। পথে পূর্বপাড়ার কোস্টগার্ড বাহিনীর কার্যলয়ের সামনে মাছটি কেনার জন্য কয়েকজন ব্যক্তি আগ্রহ দেখান। রফিক প্রথমে পুরো মাছটির দাম হেঁকেছিলেন ১২ হাজার টাকা। দর–কষাকষির একপর্যায়ে মাছটি সাড়ে আট হাজার টাকায় কিনে নেন আবু তালেব নামের এক রিসোর্টের মালিক।

আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, বোল মাছ সব সময় পাওয়া যায় না। শীতকালে পাথরের স্তূপের ভেতরে বড়শি দিয়ে এই মাছ ধরতে হয়। ভ্রমণে আসা পর্যটকের কাছে এই মাছের চাহিদা বেশি। পর্যটকদের কাছে মাছটি ‘কালো কোরাল’ নামে পরিচিত। বোল মাছ পাথরের স্তূপের ভেতরে বিচরণ করে।

ছেঁড়াদিয়ার পাথরের স্তূপে বোল মাছ শিকার ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানালেন রফিক আলম। তিনি বলেন, গতকাল রাতে তাঁরা ছয়জন জেলে বড়শি নিয়ে ছেঁড়াদিয়ায় বোল মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। তিনজনের বড়শিতে সাতটি বোল মাছ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় বোল মাছটি ধরা পড়েছে তাঁর বড়শিতে। ওজন যত বেশি হয়, বোল মাছের দামও তত বেশি পাওয়া যায়। ছেঁড়াদিয়া থেকে বোল মাছের পাশাপাশি লাল কোরাল, লবস্টারও ধরা হয় প্রচুর।

সেন্ট মার্টিনের বাজারের এক রেস্তোরাঁয় পর্যটকদের জন্য সামুদ্রিক মাছের পসরা সাজানো হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

স্থানীয় রেস্তোরাঁগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পর্যটকের খাবারের তালিকায় রূপচাঁদা, লবস্টার ও কাঁকড়ার পাশাপাশি বোল মাছের আয়োজন থাকে। বোল মাছের শরীরজুড়ে ধূসর রঙের ওপর ছোপ ছোপ লাল দাগ থাকে। নীলরঙা চোখের এই মাছ দেশের অন্য কোথাও তেমন ধরা পড়ে না।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ছেঁড়াদিয়াসহ সেন্ট মার্টিনের পাথরের স্তূপে কয়েক মাসে বিপুল বোল মাছ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৫ কেজি ওজনের বোল মাছও আছে। এমনকি পাঁচ মণ ওজনের বোল মাছ ধরা পড়ার নজিরও আছে বলে দাবি করেন তিনি। বড় আকারের বোল মাছ ধরা পড়লে এলাকায় মাইকিং করে মাছ কেটে কেজি দরে বেচাকেনা হয়।

সেন্ট মার্টিন বোট মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, দ্বীপের চারপাশে বঙ্গোপসাগরে তিন শতাধিক নৌকায় মাছ ধরেন জেলেরা। এর মধ্যে অর্ধশতাধিক নৌকায় দিন ও রাতে পাথরের স্তূপের ওপর বড়শি দিয়ে বোল মাছ ধরেন। বর্তমানে ছেঁড়াদিয়ার চারপাশে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে সরকার। তারপরও লুকিয়ে রাতের আঁধারে অনেকে বোল মাছ, লাল কোরাল ও লবস্টার ধরতে যাচ্ছেন।