ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসির শিক্ষার্থীরা

অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা, শিক্ষক নিয়োগসহ ৯ দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন করছেন। আজ রোববার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকের তালা বন্ধ করে আন্দোলন করেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা বলেছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে চালিয়ে যাবেন তাঁরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্ধারিত শর্ত না মানায় গত ৩১ জুলাই দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়কে ফার্মেসি বিভাগের স্নাতক সম্মান কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ। এই তালিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবির) ফার্মেসি বিভাগও আছে।

ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশের শর্তগুলোর মধ্যে শিক্ষকসংকট কাটানো, পাঁচটি ল্যাবরেটরি স্থাপন, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সামগ্রী পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা ও সমৃদ্ধ লাইব্রেরি তৈরিসহ প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণের কথা বলা আছে। এসব শর্ত পূরণ চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ফার্মেসি কাউন্সিল। নির্দেশনা না মেনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ফার্মেসি স্নাতক সম্মান কোর্সে (বি. ফার্স) শিক্ষার্থী ভর্তি করালে সেসব শিক্ষার্থীকে নিবন্ধন দেবে না কাউন্সিল। এমনকি শিক্ষার্থী পাস করার পর ‘পেশাগত সনদ দেওয়া হবে না’ বলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে সংস্থাটি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে তিন বছর পার করেছি। এখন জানতে পারলাম ফার্মেসি কাউন্সিল অব বাংলাদেশ তাদের শর্ত পূরণ না করলে আমাদের (শিক্ষার্থীদের) নিবন্ধন দেবে না। ফার্মেসি কাউন্সিল যেসব শর্ত দিয়েছে, তা শিক্ষার্থীরা পূরণ করতে পারবে না, পারবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীন মনোভাব আমাদের হতাশ করছে। তাই আমরা আন্দোলন করছি।’

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো:
১. ফার্মেসি কাউন্সিলের শর্তানুযায়ী ২২ জন শিক্ষকের প্রয়োজন। সেখানে বিভাগে আছে মাত্র ১৩ জন শিক্ষক। যার মধ্যে ৮ জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া।
২. ফার্মেসি কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখিত কমপক্ষে ৪টি শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করা।
৩. ছয়টি নতুন ল্যাবের ব্যবস্থা করা।
৪. পুরোনো ল্যাব দ্রুত সংস্কার করা।
৫. ল্যাবের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রাসায়নিক সরবরাহ করা, যা গত এক দশকেও দেওয়া হয়নি।
৬. অ্যানিমেল হাউসের জন্য জায়গায় বরাদ্দ ও অর্থ বরাদ্দ।
৭. ল্যাবের জন্য অ্যাটেন্ডেন্ট নিয়োগ
৮. ফার্মা গার্ডেনের জায়গা বরাদ্দ (ঔষধি বাগান) করা।
৯. ২০১৬ সালের বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বরাদ্দকৃত ৩৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার অমীমাংসিত টেন্ডারের সমাধান করা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে ফার্মেসি বিভাগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খান বলেন, ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভাগ বন্ধ হয়ে গেল, এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। করোনার জন্য যে সেশনজট হয়েছিল, আমরা তা নিরসনের জন্য সেভাবে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে এগোচ্ছিলাম, যাতে সেশনজট কমে। গত ৩১ জুলাই ফার্মেসি কাউন্সিল একটি চিঠির মাধ্যমে আমাকে জানায়, তারা রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করছে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফ্যাসিলিটি বাড়াতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে, সেগুলো তাদের প্রয়োজন। তবে আমাদের জায়গা সংকট আছে। কয়েকটি দাবি, যেমন ল্যাবের জন্য অন্তত ২ হাজার বর্গফুটের জায়গা প্রয়োজন ও ফার্মা গার্ডেনের জায়গা লাগবে। আমরা এগুলোর সমাধান করতে পারব। অন্য বিষয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।’