বাঘারপাড়ায় ইউপি সদস্যকে মারধরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল

বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাহিদ হাসান
ছবি: প্রথম আলো

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক সদস্যকে লাঠি দিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে। গত শনিবার বিকেলে উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া বাজারের পাশে এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগের এক বর্তমান ও ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গতকাল রোববার ইউপি সদস্যকে মারধরের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আজ সোমবার দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদের ১১ জন সদস্য যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।

মারধরের শিকার ওই জনপ্রতিনিধির নাম জাহিদ হাসান (৪২)। তিনি বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ইউপি সদস্যকে মারধরের ভিডিওটি ১ মিনিট ৮ সেকেন্ডের। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, সাদা টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি গাছের ডাল ও কালো টি-শার্ট পরা এক ব্যক্তি কাঠ দিয়ে বেধড়ক মারধর করছেন ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানকে। মারধরের একপর্যায়ে তিনি মাটিতে পড়ে যান। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন নারী বাধা দিতে গেলে তাঁদেরও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়। এক যুবক তাঁর মুঠোফোনে মারধরের ঘটনার ওই ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে দেন। গতকাল সেখান থেকে ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

ইউপি সদস্য জাহিদ হাসান বলেন, সাদা টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি হলেন নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম টুটুল (৪৫) ও কালো টি-শার্ট পরিহিত ব্যক্তি হলেন নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য শামীম হাসান শাপলা (৪০)। চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা ইউপি সদস্যদের কোনো কাজ দেন না। কাজ চাইতে গেলে তাচ্ছিল্য করেন। এই নিয়ে চেয়ারম্যানের সঙ্গে ইউপি সদস্যদের বিরোধ চলে আসছিল। তাঁর ওপর হামলাকারীরা চেয়ারম্যানের মদদপুষ্ট পেটোয়া বাহিনী। তিনি তাঁদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে আসছিলেন।

ইউপি সদস্য জাহিদ হাসান বলেন, শনিবার বিকেলে ব্যবসায়িক কাজে তিনি মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন। বিকেল পাঁচটার দিকে তিনি নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের আনসার মাস্টারের বাড়ির পাশে পৌঁছালে তাঁর মোটরসাইকেল থামিয়ে প্রথমে শামীম হাসান কাঠ দিয়ে তাঁকে মারতে থাকেন। এরপর জাহিদুল ইসলাম গাছের ডাল দিয়ে তাঁকে মারেন। পর্যায়ক্রমে মামুন সরদার, তৌহিদুল ইসলাম, সোহেল রানা ও জিয়া উদ্দীন তাঁকে বেদম মারধর করেন। এ সময় তাঁরা তাঁর পকেটে থাকা ৫৫ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে যান। পরে তিনি বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানকে মারধরের অভিযোগে আওয়ামী লীগ নেতা শামীম হাসান বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এক নারীর সঙ্গে ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানের অনৈতিক সম্পর্ক আছে। অনেকবার নিষেধ করার পরও তিনি শোনেননি। শনিবার বিকেলে ওই নারীর বাড়িতে এলে জনগণ তাঁকে ধরে মারধর করেন। মারধরের সময় সেখানে তিনিও ছিলেন।

ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, নারীঘটিত ব্যাপারে ইউপি সদস্যকে জাহিদ হাসানকে স্থানীয় জনগণ পিটিয়েছেন। এ সময় তিনিও পিটিয়েছেন।

এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা বলেন, ‘ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গে এক নারীর অনৈতিক সম্পর্ক আছে। শনিবার বেলা তিনটার দিকে ওই নারীর বাড়িতে ছিলেন ইউপি সদস্য। এ সময় স্থানীয় লোকজন তাঁকে সেখান থেকে ধরে এনে গণপিটুনি দিয়েছেন। এখন তিনি রং চড়িয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। ঘটনার সঙ্গে আমার কোনোই সম্পর্ক নেই। যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তাঁরা আমার লোক নন।’
এক নারীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য জাহিদ হাসান বলেন, এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। রাস্তা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

এ ঘটনার পর হামলার শিকার ইউপি সদস্য জাহিদ হাসান শনিবার রাতে চারজনের নাম উল্লেখ করে বাঘারপাড়া থানায় মামলা করেছেন।

বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দিন বলেন, এ ব্যাপারে মামলা হয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে।

জাহিদ হাসানকে মারধরের ঘটনার বিচার দাবিতে জেলা প্রশাসকের কাছে ইউপি সদস্যদের দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম হাসান, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা জাহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন ওই ইউপির চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহার মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী। তাঁরা এলাকায় মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করে আসছে। ইউপি সদস্যরা তাঁদের এই কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা এবং বাধা প্রদান করায় ইউপি সদস্য জাহিদ হাসানকে বেধড়ক মারধর করে রক্তাক্ত করা হয়েছে।