মাধবকুণ্ডের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারে তারুণ্যের হাত

স্বেচ্ছাশ্রমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান। আজ মঙ্গলবার দুপুরে মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দেশের অন্যতম একটি পর্যটনকেন্দ্র মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। এখানে প্রকৃতির কাছাকাছি কিছুটা সময় কাটাতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা ঘুরতে আসেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরেফিরে আনন্দ উদ্‌যাপন করেন। কিন্তু স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে অনেকেই সচেতন নন। পর্যটকেরা সঙ্গে নিয়ে আসা নানা খাদ্যসামগ্রীর প্যাকেট, এটা-সেটা নির্দিষ্ট স্থানে না রেখে যেখানে-সেখানে ফেলে রাখেন। তাতে স্থানটি ময়লা-আবর্জনায় নোংরা হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কাঠালতলী সমাজকল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান, শিক্ষক দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী মাধবকুণ্ড ঘুরে এসব আবর্জনা বিভিন্ন স্থানে ছড়ানো-ছিটানো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি সংগঠনের অন্য সদস্যদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেন। এরপর সংগঠনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ মঙ্গলবার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। বেলা একটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এই অভিযান চালানো হয়।

স্থানীয় ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নীল টি-শার্ট পরা একদল তরুণকে হঠাৎ করেই মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকায় পর্যটকদের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন আকার ও রঙের পলিথিন, চিপস-চানাচুরের খালি প্যাকেট ও পানির খালি বোতল কুড়াতে দেখা যায়। এসব পরিত্যক্ত আবর্জনা কুড়িয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জড়ো করে তারপর আগুনে ধ্বংস করেন তাঁরা। পরে কাঠালতলী সমাজকল্যাণ পরিষদের পক্ষ থেকে সেখানে একটি ডাস্টবিনও দেওয়া হয়েছে। এই অভিযানে সংগঠনের সদস্যরা ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে অংশ নেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, উপজেলার দক্ষিণভাগ উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী বেলাল আহমদ বলেন, ‘পর্যটকেরা যত্রতত্র পলিথিন, চিপস-চানাচুরের খালি প্যাকেট, পানির বোতল ফেলে যান। সংগঠনের সদস্যরা সেগুলো কুড়ানোর পর পুড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁরা একটি ভালো কাজ করেছেন। আমরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলাম।’

কাঠালতলী সমাজকল্যাণ পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে পর্যটকের ভিড় তো আছেই। এ ছাড়া প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকেরা মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে ঘুরতে আসেন। পর্যটকেরা সঙ্গে নিয়ে আসেন বিভিন্ন ধরনের পলিথিনে মোড়ানো খাবার, চিপস-চানাচুরের প্যাকেট, পানির বোতল ইত্যাদি। ঘুরতে ঘুরতে এখানেই তাঁরা খাওয়াদাওয়া করেন। কিন্তু খাবারের পর পরিত্যক্ত বর্জ্যগুলো নির্দিষ্ট স্থান বা ডাস্টবিনে না ফেলে যত্রতত্র ফেলে যান। এতে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত ও মাধবকুণ্ড ইকোপার্ক এলাকার পরিবেশ, সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। অনেক পর্যটকই পরিবেশের দিকটি সম্পর্কে সচেতন নন। সম্প্রতি মাধবকুণ্ড ঘুরতে গিয়ে বিষয়টি নজরে আসে কাঠালতলী সমাজকল্যাণ পরিষদের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন চৌধুরীর। তিনি মাধবকুণ্ড এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার কথা ভাবেন। বিষয়টি নিয়ে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গেও আলাপ করেন। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সংগঠনের সবাই সম্মতি দেন। সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো হয়েছে।

সংগঠনের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে অভিযানে অংশ নেন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী, সভাপতি আবদুল্লাহ আল সাজু, সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহমেদ, সহসভাপতি সাব্বির আবির, অর্থ সম্পাদক মো. আবদুল গাফফার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হামিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোর্শেদ আলম, কামরান হোসেন, আলী হায়দার, মুহিবুর রহমান ও মারওয়ান হোসেন, ক্রীড়া সম্পাদক শাহজাহান চৌধুরী, সহশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান, প্রচার সম্পাদক ইকবাল হোসেন, মর্তুজ আলী, পাঠাগার সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ শাম্মু, স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক রুম্মান আহমদ, সমাজকল্যাণ সহসম্পাদক জামিল আহমদ, সদস্য আইনুল ইসলাম প্রমুখ।

দেলওয়ার হোসেন চৌধুরী আজ বলেন, ‘মাধবকুণ্ড আমাদের ইউনিয়নের মধ্যেই পড়েছে। প্রায়ই সেখানে গিয়ে থাকি। গেলেই দেখি, যেখানে-সেখানে পলিথিন, চিপস-চানাচুরের খালি প্যাকেট ও পানির খালি বোতল পড়ে আছে। পর্যটকেরা এগুলো ডাস্টবিনে না ফেলে ইচ্ছেমতো যত্রতত্র ফেলে রাখেন। এতে মাধবকুণ্ডের পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। সবার সঙ্গে কথা বলে এই পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।’

বড়লেখা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন বলেন, ‘কাঠালতলী সমাজকল্যাণ পরিষদের সদস্যরা মাধবকুণ্ডে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করেছেন। এই উদ্যোগের খবর পেয়ে আমিও এসে তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আমাদের সবার উচিত তাঁদের মতো সচেতন হওয়া, নিজেদের আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এতে পরিবেশ সুন্দর ও দূষণমুক্ত থাকবে।’