দীর্ঘদিন পর টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনের পথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু

জাহাজ চলাচল শুরুর প্রথম দিনে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন ৬৭১ জন পর্যটক
ছবি: প্রথম আলো

দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় ৬৭১ জন পর্যটক নিয়ে টেকনাফের দমদমিয়া অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জাহাজঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস নামে দুটি জাহাজ। জাহাজ দুটি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

সাগর উত্তাল হওয়ার পাশাপাশি কালবৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কায় দুর্ঘটনা এড়াতে গত বছরের ৩১ মার্চ থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন, সেন্ট মার্টিন-কক্সবাজার ও সেন্ট মার্টিন-চট্টগ্রাম তিনটি নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। ওই সময় এ তিনটি নৌপথে ১২টি জাহাজ চলাচল করেছিল। একই বছরের গত ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারে আয়োজিত এক সেমিনারে পর্যটনসচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন সেন্ট মার্টিন-টেকনাফ নৌপথে নাফ নদীর নাব্যতা সংকট ও একাধিক বালুচর জেগে ওঠার কথা বলে জাহাজ চলাচল বন্ধের কথা জানান। ফলে চলতি মৌসুমের শুরু থেকে (১ নভেম্বর) কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখে প্রশাসন।

টেকনাফ জাহাজঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস নামে দুটি জাহাজ
ছবি: প্রথম আলো

এর মধ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে গত বুধবার অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে নাফ নদী দিয়ে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের বিষয়ে কক্সবাজারে আবার সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জাহাজ চলাচলের অনুমতি প্রদানের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুন

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান বলেন, কিছুটা বিলম্ব হলেও চলতি পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই আজ সকালে এমভি পারিজাত ও এমভি রাজহংস নামে দুটি জাহাজে করে ৬৭১ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী পরিবহন না করার পাশাপাশি জাহাজে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেটসহ পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য জাহাজ দুটি পরিদর্শন করা হয়। এ নৌপথে আরও কয়েকটি পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতির অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের টেকনাফের সহকারি পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, এই নৌপথে চলাচলের জন্য আরও কয়েকটি জাহাজ ছাড়পত্র পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের অনুমতি পেলে সেগুলো অতি শীঘ্রই পর্যটক পরিবহন শুরু করবে।

আজ সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণের জন্য আসা পর্যটকেরা টেকনাফের দমদমিয়ায় বিআইডব্লিউটিএর জাহাজঘাটের টিকেট কাউন্টারগুলোর সামনে ভিড় করেন। অনেকে টিকেট সংগ্রহ করে জাহাজে নির্দিষ্ট আসন নেন। এর কিছুক্ষণ পরে ঘাটে আসেন ইউএনও মো কামরুজ্জামান, টুরিস্ট পুলিশ, নৌপুলিশ ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের শুভেচ্ছা জানান।

ঢাকার বাড্ডা এলাকা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবারের ১৫ সদস্যকে নিয়ে সময় কাটানোর পাশাপাশি সমুদ্রস্নানের জন্য তৃতীয়বার সেন্টমার্টিনে যাচ্ছি। আশা করি ভ্রমণ আনন্দদায়ক হবে।’

আরও পড়ুন

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ বলেন, আজ প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের মানুষের মনে ঈদের আনন্দ লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রায় সাড়ে নয় মাস পর টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে জাহাজ চলাচল শুরু হওয়াই দ্বীপে এ উৎসব আমেজ লেগেছে। অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও কটেজে সাজ সাজ রব।

পর্যটকবাহী জাহাজের কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক তোফায়েল আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, চলতি মৌসুমে কিছুটা বিলম্ব হলেও আজ শুক্রবার থেকে পুনরায় পর্যটক পরিবহন শুরু হয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে নয়টায় টেকনাফের দমদমিয়া জাহাজঘাট থেকে সেন্ট মার্টিনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। আর বেলা তিনটায় সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে জাহাজ রওনা হবে। প্রথম দিনেই দুটি জাহাজে ৬৭১ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন।