পুলিশের দাবি, পূর্ববিরোধের জেরেই খুন হন ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় গুলিতে নিহত ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমানের মা ফেরদৌসী রহমানের আহাজারি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কলেজপাড়ার বাড়ি থেকে তোলা
ছবি: প্রথম আলো

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে কথা–কাটাকাটি থেকে ধাক্কা দেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আনারস প্রতীকের জয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের আনন্দমিছিলে ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমানকে (২৩) গুলি করে খুন করেছেন আরেক ছাত্রলীগ নেতা হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত আশরাফুলের লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

তবে আশরাফুলের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে পরিবার ও পুলিশের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। পরিবার ও স্বজনদের অভিযোগ, ভোটকেন্দ্রের বাইরের কথা-কাটাকাটির জেরে ধাক্কার দেওয়ার ঘটনার প্রতিশোধ নিতেই গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, দুটি পক্ষই আনারস প্রতীকের প্রার্থীর অনুসারী। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, পূর্ববিরোধ, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে ঘটনার পরপর গত বুধবার রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগর দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আল ফারাবীকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করা হয় বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

নিহত আশরাফুল ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের মুসলিমপাড়ার বাসিন্দা আমিনুর রহমানের ছেলে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী এবং সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেনের পক্ষের কর্মী ছিলেন। যাঁর বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে, সেই হাসান আল ফারাবীও শাহাদাৎ হোসেনের পক্ষের কর্মী।

নিহত তরুণের পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, জেলা শহরের কলেজপাড়ায় দক্ষিণ অংশে নেতৃত্ব দেন জুরু মিয়ার পক্ষ এবং উত্তর অংশে নেতৃত্ব দেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল হোসেন ওরফে খোকা। তাঁদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। নিহত আশরাফুল দক্ষিণ অংশের পক্ষের এবং গুলি করা ছাত্রলীগ নেতা হাসান উত্তর অংশের পক্ষের। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলা শহরের খ্রিষ্টিয়ান মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের বাইরে শাহাদৎ হোসেনের দুটি পক্ষ অবস্থা নেয়।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ওই কেন্দ্রের বাইরে উপস্থিত হন সাবেক ভিপি জালাল হোসেন। সাড়ে তিনটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটার মধ্যে ওই ভোটকেন্দ্রের বাইরে আনারস প্রতীকের প্রার্থীর দুই পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। সে সময় আশরাফুলকে কেউ একজন চেয়ার দিয়ে আঘাত করেন। এর প্রতিবাদে আশরাফুল একপর্যায়ে হাসানকে ধাক্কা দেন ও বকাঝকা করেন। এর প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেন হাসান। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে আনারসের কিছু সমর্থক আনন্দমিছিল নিয়ে কলেজপাড়ার খান টাওয়ার এলাকায় পৌঁছান। সেখানে জালাল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকটি মোটরসাইকেলে একটি দল যায়। মিছিলে থাকা আশরাফুলকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি করেন হাসান। এতে আশরাফুল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

আশরাফুলের মা ফেরদৌসী রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসরের পর ছেলেকে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম, এখন তো নির্বাচন শেষ, বাসায় আইসা পড়। ছেলে আর আইল না। আমার একমাত্র ছেলে। আমার বুকটা খালি কইরা দিছে। আমি এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’

জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নবনির্বাচিত সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ব্যক্তিগত বিরোধ থেকে এমন হয়েছে। নির্বাচনের কোনো বিষয় এর সঙ্গে জড়িত নয়। অপরাধী কোনো দলের হতে পারে না। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, পূর্ববিরোধ, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এ ঘটনার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি জড়িত। পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। এখনো নিহত আশরাফুলের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো এজাহার দেওয়া হয়নি।