জামায়াত নেতার বাড়িতে ডেপুটি স্পিকারসহ সংসদ সদস্যদের মধ্যাহ্নভোজ

জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় গাছের চারা রোপণ করেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক ও তাঁর সঙ্গে থাকা সংসদ সদস্যরা
ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক বুধবার ঈশ্বরদীতে জামায়াত নেতার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের ১১ জন সংসদ সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নূরুজ্জামান বিশ্বাস।

পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভা জামায়াতের আমির গোলাম আজমের বাড়িতে বুধবার দুপুরে এই মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন হয়।

জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক বুধবার সকালে ঈশ্বরদীর রূপপুরে নির্মাণাধীন পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে যান। তিনি প্রকল্প এলাকার ইউনিট-১ ও ২ পরিদর্শন করেন। এ ছাড়া প্রকল্প–সংশ্লিষ্ট রুশ প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে প্রধান প্রকৌশলী খোশলেভ প্রকল্পের অগ্রগতিবিষয়ক একটি প্রেজেন্টেশন প্রত্যক্ষ করেন। ২০২৩ সালে ‘সিভিল ওয়ার্ক’ শেষ হতে পারে এবং ২০২৪ সালের নভেম্বর নাগাদ অন্যান্য কাজ শেষ হতে পারে বলে প্রকৌশলীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের নেতৃত্বে প্রকল্প পরিদর্শনে যোগ দেন সংসদ সদস্য নূরুজ্জামান  বিশ্বাস, শাহিন আক্তার, খালেদা খানম, শিরীন আহমেদ, জিন্নাতুল বাকিয়া, বাসন্তী চাকমা, শামসুন নাহার, নার্গিস রহমান, মনিরা সুলতানা, নাদিরা ইয়াসমিন, রত্না আহমেদ, সালমা চৌধুরী, সেলিনা ইসলাম ও ডরথী রহমান।

স্থানীয় লোকজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের নেতৃত্বে সংসদ সদস্যরা ঈশ্বরদী পৌরসভা জামায়াতের আমির ও আরআরপি ফিড মিলের মালিক গোলাম আজমের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রাম করেন। পরে তাঁরা আরআরপি ফিড মিলের আঙিনায় একটি চারা রোপণ করেন। এরপর পাবনা জেলা শহরের সার্কিট হাউসে মহিলা আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিতে রওনা হন তাঁরা।

গোলাম আজমের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করেন পাবনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ইকবাল হোসাইন। তিনি বলেন, ‘আমরা সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করি, সেখানে রাষ্ট্রের এমপি–মন্ত্রী পর্যায়ের লোকজন আসতেই পারেন। এতে দোষের কিছু আছে বলে মনে করি না।’

জানতে চাইলে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আরআরপি গ্রুপের মালিক গোলাম আজম, মনসুর আলম, মনিরুল আলম ও আজমত আলম চার ভাই। ডেপুটি স্পিকার আমন্ত্রিত ছিলেন বলে আমিও গিয়েছিলাম। তবে এটি রাজনৈতিক কোনো অনুষ্ঠান নয়। তাই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা বিব্রতকর।’

এ বিষয়ে জানতে গোলাম আজমের মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে আরআরপি গ্রুপের পরিচালক ও গোলাম আজমের ভাতিজা রফিকুল আলম বলেন, ‘ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক আমার মামা। আমাদের আমন্ত্রণে তিনিসহ এমপি মহোদয়েরা আমাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন। তাঁরা দুপুরে খাওয়া শেষে বিশ্রাম নিয়ে চলে গেছেন।’

এদিকে এতজন সংসদ সদস্য নিয়ে জামায়াত নেতার বাড়িতে ডেপুটি স্পিকারের মধ্যহ্ন ভোজ ও বিশ্রাম নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। ঈশ্বরদী পৌর যুবলীগের সভাপতি মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘সরকারদলীয় এমপিদের আর খাওয়ার জায়গা ছিল না! জামায়াত নেতার বাড়িতে খেতে হলো! বিষয়টি লজ্জাজনক।’

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি জানি না। কিছু বলারও নেই।’

পাবনা-৪ আসনের (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের সফর ও খাবারের বিষয়টি জাতীয় সংসদের ব্যবস্থাপনায় হয়েছে। তাঁদের আমন্ত্রণেই আমি রূপপুর প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আরআরপি গ্রুপের নিমন্ত্রণ পেলেও আমি সেখানে যাইনি। জরুরি কাজে ঢাকায় চলে আসছি।’

এ প্রসঙ্গে জানতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হকের মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলে তিনি ধরেননি। তবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, সংসদ সদস্যদের আগমনে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ব্যবস্থাপনায় খাবারের আয়োজন ছিল। এ বিষয়ে তিনিই ভালো জানেন।