গ্রামের ১০ বাসিন্দার বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় আদালতে এসেছেন ৪০০ জন

বালুর সঙ্গে মাটি কাটার প্রতিবাদে রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে প্রায় চার শ নারী-পুরুয রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হনছবি: প্রথম আলো

পদ্মা নদী থেকে বালুর সঙ্গে মাটি তোলার প্রতিবাদ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সেখেরপাড়া ও বারোমাইল-বিদিরপুর গ্রামের ১০ জনের নামে মামলা করেছিলেন ইজারাদার। প্রতিবাদ হিসেবে মামলার হাজিরার দিনে আদালতে এসেছেন ৩ গ্রামের প্রায় ৪০০ বাসিন্দা। আজ রোববার সকালে  রাজশাহীর আদালত প্রাঙ্গণে এ ঘটনা ঘটে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, বালু মহালের ইজারাদারদের পক্ষে সম্প্রতি আজাদ আলী নামের এক ব্যক্তি ৩ গ্রামের ১০ বাসিন্দার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাটি করেন। আদালত আসামিদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে আজ রোববার সশরীরে আদালতে উপস্থিত হতে বলেন। নোটিশ পেয়ে আজ সকালে বিবাদীরা রাজশাহীর আদালতে আসেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ৩ গ্রামের অন্তত ৪০০ মানুষ। রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন।

জেলা প্রশাসনের ইজারা দেওয়া এই বালুমহালটি গোদাগাড়ী উপজেলার সেখেরপাড়া গ্রামে। মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম, সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন এই বালুমহালটি ইজারা নিয়েছেন। তাঁদের লোকজন গ্রামের পাশ থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

বিক্ষোভে এসেছিলেন এলাকার কলেজশিক্ষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবদুস সালাম। বালু কারবারিদের মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে। আবদুস সালাম বলেন, ‘যেভাবে গ্রামের পাশ থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে, তাতে কয়েকটি গ্রাম হুমকির মুখে পড়েছে। এলাকার মসজিদ, স্কুল থেকে শুরু করে সবই ভরা মৌসুমে পদ্মায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই আমরা মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করেছিলাম। ইউএনওর কাছে আমরা অভিযোগ দিলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসে মাটি কাটা বন্ধ করেন। ইজারা গ্রহণকারীরা কোনদিকে কতটুকু বালু ও মাটি কাটবেন, তা তিনি দেখিয়ে দিয়ে যান। এরপরও তাঁরা গ্রামের পাশ থেকে মাটি কাটতে শুরু করেন। তখন বাধা দিলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।’

গ্রামের বাসিন্দা গোলাম কবির খোকন বলেন, ‘নদীর পানি নেমে যাওয়ার পর গ্রামের পাশে দরিদ্র লোকজন চাষাবাদ করেন। সেই জমির ফসলসহ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটার জন্য। এর ফলে গ্রামের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাঁরা চাষাবাদ থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি গ্রামের পাশে গভীর খাদ তৈরি হচ্ছে। আসছে ভরা মৌসুমে পানি এলেই ভাঙন শুরু হবে। এর ফলে কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।’

গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়ে বালুমহাল ইজারাদারদের একজন আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পদ্মা নদীর এই জায়গা তাঁদের বৈধভাবেই ইজারা নেওয়া। প্রতিবছর পানির সঙ্গে যে পলিমাটি এসে গর্ত ভরাট হয়ে যায়, তা পরের বছর ইজারা নিয়ে তাঁরা উত্তোলন করে থাকেন। এই বালির সঙ্গে মাটিও থাকে। কিন্তু তাঁরা কারও ফসলের জমি কাটেননি এবং বালু উত্তোলনের ফলে নদী ভাঙনেরও কোনো আশঙ্কা নেই। গ্রামের লোকেরা তাঁদের লোককে হুমকি দিয়েছিলেন বলে মামলা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।