পঞ্চগড়ে বহিষ্কৃত নেতারা বিব্রত করল বিএনপিকে
বিএনপি নেতা পরিচয়ে অংশ নেওয়া নয়জন প্রার্থীর মধ্যে সাতজনই পরাজিত হওয়া। তাঁদের প্রাপ্ত ভোট নিয়ে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
পঞ্চগড়ে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। পাঁচটি উপজেলার চারটিতে বিএনপির ৯ জন নেতা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে মাত্র দুজন ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হন। তাঁরা দুজনই নারী।
বিএনপি নেতা পরিচয়ে অংশ নেওয়া নয়জন প্রার্থীর মধ্যে সাতজনই পরাজিত হওয়া এবং তাঁদের প্রাপ্ত ভোট নিয়ে দলের ভেতরে বাইরে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ গতকাল বুধবার বলেন, ‘আমরা ভোট বর্জন করেছি এবং আমাদের নেতা-কর্মী- সমর্থক ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের প্রতি আমরা ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা মনে করি, আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েই জনগণ ভোট দিতে যায়নি। সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ ভোট দিতে গেছেন।’
তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতারা হলেন, তেঁতুলিয়ায় মুক্তারুল হক, বোদায় হাবীব আল আমীন এবং দেবীগঞ্জে রহিমুল ইসলাম। আর ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ছয়জন। তাঁরা হলেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলায় কাজল রেখা, তেঁতুলিয়ায় সুলতানা রাজিয়া, বোদা উপজেলায় লাইলী বেগম ও মোরসালিন বিন মমতাজ, দেবীগঞ্জে আব্দুর রহিম, তেঁতুলিয়ায় খন্দকার আবু সালেহ ইব্রাহীম। সুলতানা রাজিয়া ও লাইলী বেগম ছাড়া বাকি চারজনই পরাজিত হয়েছেন।
প্রাপ্ত ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সুলতানা রাজিয়া ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। সেখানে চেয়ারম্যান প্রার্থী মুক্তারুল হক বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। তিনি ১১ হাজার ৮৬৫ ভোট পান। বিজয়ী চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন খান পেয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৪০ ভোট। নিজাম একজন ব্যবসায়ী। তিনি কোনো দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁরা পেয়েছেন ১৮ হাজার ৫০১ ভোট পান।
বোদা উপজেলায় লাইলী বেগম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৫৪৭ ভোট। তবে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবীব আল আমীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যান। তিনি ২৩ হাজার ৮০১ ভোট পেয়েছেন। এই উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের চারজন নেতা প্রার্থী ছিলেন। ভোটের ফলাফলে দেখা যায় তাঁরা চারজন মিলে মোট ৬২ হাজার ৮৭৯ ভোট পেয়েছেন।
দেবীগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রহিমুল ইসলাম চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ২৪ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়েছেন। এই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা এবং একই ঘরানার চারজন প্রার্থী ছিলেন। তাঁরা চারজন মিলে ৮৪ হাজার ভোট পেয়েছেন।
তিন উপজেলায় বিএনপির বহিষ্কৃত নেতাদের প্রাপ্ত ভোট স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তাঁদের কেউ কেউ মনে করছেন, এবারের উপজেলা নির্বাচন ক্ষমতাসীনদের একতরফা হলেও ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। ফলে বিএনপির পরিচয়ে প্রার্থী হওয়া নেতাদের এত কম ভোট পাওয়া নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে যে, বিএনপির ভোটের প্রকৃত অবস্থানটা কোথায়? কারণ বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলটির সাধারণ কর্মী সমর্থকেরা যে একেবারে ভোট দিতে যায়নি তা-ও না।
এর উদাহরণ হিসেবে অনেকে নির্বাচনের আগে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদের ফাঁস হওয়া একটি অডিওর কথা বলছেন। এই অডিওতে তিনি দলীয় নেতাদের প্রার্থী হওয়া এবং কর্মী-সমর্থকদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে কথা বলেন। এ বিষয়ে কেন্দ্রে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগও যায়। যদিও তিনি এই অডিওতে শোনা যাওয়া কণ্ঠ তাঁর নয় বলে দাবি করেন।
নির্বাচনে বিএনপির ভোট কমল কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘তাঁরা তো বিএনপির প্রার্থীই না, তাঁদের দল বহিষ্কার করেছে। জনগণও তাঁদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে এই ভোটে কারও ফলাফল নিয়ে বিএনপিতে কোনো বিভ্রান্তি নেই’।