‘খুলনা বিভাগেই ১৯ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব’

বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা শীর্ষক এক সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে
ছবি: প্রথম আলো

২০৫০ সাল নাগাদ খুলনা বিভাগে বিদ্যুতের চাহিদা থাকবে ৯ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট। সঠিক পরিকল্পনা ও স্বল্প পুঁজি ব্যবহার করে শুধু খুলনা বিভাগেই ১৯ হাজার ৭৭০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পতিত খাসজমি ছাড়াও বাড়ির ছাদ ও জলাভূমির মাত্র ১৫ শতাংশ ব্যবহার করতে হবে। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ পড়বে মাত্র ৫ টাকা ২৬ পয়সা। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় ৬ বছরেই বিনিয়োগ উঠে আসবে।

আজ মঙ্গলবার দুপরে খুলনার একটি অভিজাত হোটেলে ‘বাংলাদেশের সৌরবিদ্যুতের সম্ভাবনা: ভূমিস্বল্পতার অজুহাত ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব তথ্য উপস্থাপন করেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের কোনো বিকল্প নেই। বিশ্বের বড় দেশগুলো সেটিই করছে। কিন্তু বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের প্রসঙ্গ তুললেই মন্ত্রীসহ সরকারের কর্মকর্তারা বলেন, সৌরবিদ্যুতের জন্য অনেক জায়গা প্রয়োজন, যেটা বাংলাদেশে নেই। এ অবস্থায় সৌরবিদ্যুতের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি আছে কি না, এবং কী পরিমাণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব, তা নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

সেমিনারে ‘সৌরবিদ্যুতের ভূমি ব্যবহারের সত্য-মিথ্যা’ শিরোনামে গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোটের (ক্লিন) প্রধান নির্বাহী হাসান মেহেদী।

হাসান মেহেদী বলেন, সরকারি হিসাবে খুলনা বিভাগে পতিত খাসজমি ১ লাখ ৩৩ হাজার একর। ভবনের ছাদ ৮ হাজার ৫৯০ লাখ বর্গমিটার। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক জলাভূমি আছে ৫৪ হাজার ৭৪১ একর। এ খাসজমির মাত্র ৩৯ শতাংশ এবং ছাদ ও জলাভূমির মাত্র ১৫ শতাংশ ব্যবহার করে ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু খুলনা বিভাগেই ১৯ হাজার ৭৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবে ২০৫০ সালে খুলনায় চাহিদা থাকবে ৯ হাজার ২২৫ মেগাওয়াট। সঠিকভাবে সৌরবিদ্যুৎ স্থাপন করা গেলে চাহিদার তুলনায় সাড়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উদ্বৃত্ত করা সম্ভব।

হাসান মেহেদী আরও বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ১ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ১৩ টাকা ৪০ পয়সার ফার্নেস তেলের প্রয়োজন হয়। সেখানে সৌরবিদ্যুতে প্রতি ইউনিটে খরচ হবে মাত্র ৫ টাকা ২৬ পয়সা। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো চালাতে প্রতিবছর ৫০ লাখ টনের বেশি ফার্নেস তেল প্রয়োজন হয়। যার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। তেলের পেছনে মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়। এ বছর অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে ৩৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা গেলে এর পুরোটাই বেঁচে যাবে।

সেমিনারে অন্যান্যের মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, খুলনা পল্লী বিদ্যুতের মহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান, খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আশিকুর রহমান, জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার হরে কৃষ্ণ অধিকারী, সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল কাদির ও কালের কণ্ঠের খুলনা ব্যুরো প্রধান গৌরাঙ্গ নন্দী বক্তব্য দেন।